সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, মুরগিরা আগে পাখির মতো গাছেই থাকত। তাদের সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য ছিল ধান। তাই লোকেরা ধান উঠোনে শুকোতে দিলেই আর পাঁচটা পাখির মতোই মুরগিগুলো গাছ থেকে নেমে ধান খাবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ত। যত না খেত, তার চেয়ে বেশি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নষ্ট করত।
তাই ধান শুকোতে দিলেই বাড়ির একজনকে ঠায় পাহারা দিতে হতো। কিন্তু সে এক মুহূর্ত সরলেই ধানের দফারফা। এই অত্যাচার থেকে রেহাই পাবার জন্যেই যেখানে ধান শুকাতে দেওয়া হতো, তার ক’হাত দূরেই মুরগিদের জন্য আলাদাভাবে ধান ছিটিয়ে দেওয়া হতো। সেই ধানের লোভেই মুরগিগুলো ঘুরঘুর করত উঠোনে। এই ধানকে কেন্দ্র করেই মানুষের সঙ্গে মুরগির একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মুরগিগুলো ধীরে ধীরে মানুষের পোষ মেনে যায়।
এই মুহূর্তে গোটা দুনিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় খাদ্য হিসেবে মুরগির ঝোল, মানে চিকেন স্যুপকে কখনও কখনও রুগির পথ্যের তালিকার প্রথম দিকে রাখলেও, মানুষ কিন্তু আগে মুরগি খেত না। বরং মুরগি ছিল বিনোদনের একটি অঙ্গ। মুরগিকে বাবা হতো বিরলজাতের অপরূপ সুন্দর একটি পাখি হিসেবে। আরও পরে আদিবাসীদের মধ্যে চালু হয় বিনোদনের অন্যরূপ— মুরগির লড়াই।
মুরগি সংক্রান্ত নতুন এই তথ্যটি তুলে ধরেছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটার, ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড এবং কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির এক দল গবেষক। আগে বিশ্বাস করা হতো, মুরগিকে আদিম মানুষ পোষ মানিয়েছিল মোটামুটি দশ হাজার বছর আগে। কিন্তু ‘অ্যান্টিকুইটি’ জার্নালে প্রকাশিত নতুন এই গবেষণাপত্র থেকে জানা যায়, মুরগির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে। অর্থাৎ অন্যান্য পশুপাখির তুলনায় অনেক পরে মুরগিকে পোষ মানিয়েছিল মানুষ।
পূর্ব ইউরেশিয়া ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকায় পাওয়া সবচেয়ে প্রাচীন ২৩টি মুরগির ফসিলের কার্বন ডেটিং করে এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছেন তাঁরা।
গবেষক কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির ড. জুলিয়া বেস্ট বলেন, ‘আদিম সমাজে মুরগির গুরুত্ব কতখানি ছিল, সেটা একদম নিখুঁত ভাবে জানার জন্য এই প্রথমবার রেডিওকার্বন ডেটিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।’
সেই গবেষণা থেকেই জানা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্রান্তীয় জঙ্গলগুলোর স্থানীয় পাখি ছিল মুরগি। ইউরোপে খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ অব্দের আগে মুরগির আগমনই ঘটেনি। এর পর ভূমধ্যসাগরে মুরগি পৌঁছনোর আরও ১০০০ বছর পরে স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, স্ক্যান্ডিনেভিয়া ও আইসল্যান্ডের শীতল আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে থাকে মুরগি।
পৃথিবীর ৮৯টি দেশের ৬০০টির বেশি মুরগির অবশিষ্টাংশ পরীক্ষা করে গবেষকেরা জানতে পারেন, সবচেয়ে পুরনো হাড়ের মুরগিটির অস্তিত্ব ছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৬৫০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১২৫০ অব্দ পর্যন্ত।