এক সপ্তাহ ধরে ভারী বৃষ্টি এবং মেঘালয় থেকে সোমেশ্বরী, গণেশ্বরী ও উদ্বাখালী নদী দিয়ে বয়ে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির কারণে নেত্রকোনা জেলার প্রায় সব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরি উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে। এসব উপজেলার উঁচু ভূমিগুলোও তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দুর্গাপুরের বিজয়পুর পয়েন্টে সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কলমাকান্দা পয়েন্টে ৬৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া মোহনগঞ্জ ও বারহাট্টা উপজেলায় অসংখ্য গ্রামের বাড়িঘরে পানি উঠেছে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এক সপ্তাহ ধরে নেত্রকোনা জেলায় ভারি বৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি যেন থামছেই না। আর বিভিন্ন নদী দিয়ে ধেয়ে আসছে পাহাড়ি ঢলের পানি। বালির স্তর জমে এসব নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় দুই কূল ছাপিয়ে লোকালয়ে চলে আসছে পানি।
দুর্গাপুর পৌর এলাকার কাচারি মোড়, মোক্তারপাড়া, চরমোক্তারপাড়া, তেরিবাজার, মুজিবনগর এবং পৌর এলাকার বাইরের বালিকান্দি, খরস, চকলেঙ্গুরা, ঝাঞ্জাইল, শান্তিপুর, মাদুরপাড়, জয়নগর ও রামবাড়ি এলাকার অসংখ্য বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। এসব এলাকার মানুষ উঁচু এলাকাগুলোতে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন।
অন্যদিকে কলমাকান্দা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের সবকটিই বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। কলমাকান্দা বাজারের অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। প্লাবিত এলাকার কিছু পরিবার কলমাকান্দা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিচতলাতেও ঢুকে গেছে বন্যার পানি। এ কারণে চিকিৎসা সেবাদান কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বড়খাপন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, “আমার ইউনিয়নের সব গ্রামই প্লাবিত। অনেকে গবাদিপশু রাখারও জায়গা পাচ্ছেন না। বাড়িঘর ছেড়ে মানুষ উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন।”
মোহনগঞ্জের পরিস্থিতিও ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যাচ্ছে। এই উপজেলার হাওরসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা ইতোমধ্যেই তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছেন। মোহনগঞ্জে ইতোমধ্যেই চারটি জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
নেত্রকোনার প্লাবিত উপজেলাগুলোর মানুষজন ঘর থেকেই বেরোতে পারছেন না। বন্ধ হয়ে গেছে বহু দোকানপাট। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ। চুলা ডুবে যাওয়ায় অনেকের রান্নাবান্নাও বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে সোমেশ্বরী নদীর পানির চাপে দুর্গাপুরের সীমান্ত এলাকার ভবানীপুর-ফারাংপাড়া এলাকার একটি সীমান্ত সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুর্গাপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব উল আহসান সড়কের ভাঙা অংশ পরিদর্শন করেছেন।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যা পরিস্থিতিতে দুর্গত মানুষদের আশ্রয় দিতে আমরা স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা দুই উপজেলায় শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিছু আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আসতে শুরু করেছেন। দুর্গত উপজেলাগুলোর মানুষদের জন্য ২০ টন চাল, প্রতি উপজেলার জন্য ১ লাখ করে টাকা এবং ৫০০ প্যাকেট করে শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।