বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশনের পর রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই করার ঘটনায় সহকারী সার্জন ডা. তারেককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দুইজন সিনিয়র স্টাফ নার্সকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তাদের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।
রোববার (১২ জুন) সন্ধ্যায় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ওই রোগীর অপারেশন করেছেন প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক সহকারী সার্জন তারেক। প্রসূতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ভুলে পেটের মধ্যে গজ রেখে সেলাই করে দেন। তিনি তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন কাজটি ভুলে করেছেন। তার এমন কাজের জন্য আজ তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ডা. তারেক হাসপাতালের অনারারি মেডিকেল অফিসার পদে ছিলেন। তিনি এমবিবিএস পাস করে হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।
ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, অপারেশনের পর গজগুলো কাটার দায়িত্ব মূলত নার্সদের। কিন্তু তারাও দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। এজন্য সিনিয়র স্টাফ নার্স মিঠু রানী দাস ও সুমি সরকারকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাদের জবাব মনঃপূত না হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ এপ্রিল রাতে সিজারের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ঝালকাঠীর নলছিটি উপজেলার বাসিন্দা জিয়াউল হাসানের স্ত্রী শারমিন আক্তার শিলা। অস্ত্রোপচারের পর থেকে পেটে ব্যথা অনুভব করছিলেন তিনি। এ জন্য সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার কিছু দিন পর শুরু হয় প্রচণ্ড পেটে ব্যথা। ফুলে যায় পেট। ২১ মে পেট ফুটো হয়ে পুঁজ বের হয়। তাৎক্ষণিক ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। সেখানে ২২ মে পুনরায় অপারেশন করা হয়। অপারেশনে জানা যায়, ১৬ এপ্রিল সিজারের সময়ে প্রসূতির পেটে গজ রেখে সেলাই করে দেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি তদন্ত শেষে শনিবার (১১ জুন) প্রতিবেদন দাখিল করে। রোববার (১২ জুন) অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগ নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পেটে গজ রেখে সেলাইয়ের ঘটনায় ভিকটিম শারমিন আক্তার শিলাকে দ্রুত যথপোযুক্ত হাসপাতালে স্থানান্তর করে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণে গত মঙ্গলবার (৮ জুন) নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। বরিশালের সিভিল সার্জনকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট জীবন নেছা মুক্তা, অ্যাডভোকেট সাকলান ইমন ও ফারিয়া জামান।
উচ্চ আদালত এ ঘটনা তদন্ত করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন। এছাড়া শারমিন আক্তার শিলাকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি তার চিকিৎসায় অবহেলার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।