ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় রিকশায় করে বাসায় ফেরার পথে মোটরসাইকেলে করে আসা এক ব্যক্তির হাতে নিপীড়নের শিকার সেই তরুণী শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাতে কারও নাম উল্লেখ না করে ভুক্তভোগী তরুণী মামলা করেছেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মমর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে করা মামলায় কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। পুলিশ সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কাজ শুরু করেছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নীলক্ষেত দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের সামনে আসলে পেছন থেকে মোটরসাইকেলে আসা এক ব্যক্তি হঠাৎ খামচে ধরে তার জামা ছিড়ে ফেলে; এরপর গালাগাল করতে করতে চলে যায়।
বৃহস্পতিবার বিকালে শাহবাগ থানায় গিয়ে এ ঘটনায় প্রথমে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন তিনি। পরে রাতে মামলা করেন।
আক্রমণের শিকার হওয়ার পর তিনি ফেসবুকে এক পোস্টে ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন। তিনি স্বাভাবিক নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলেছেন একই পোস্টে। ভুক্তভোগী তরুণী জানান, মোটরসাইকেলে আসা এক ব্যক্তি হঠাৎ খামচে ধরে তার জামা ছিড়ে ফেলেন। এরপর গালাগাল করতে করতে চলে যান। এ সময় তিনি চিৎকার করলেও আশপাশের কেউ এগিয়েও আসেনি।
ফেসবুকে নিজের প্রোফেইলে ওই ঘটনা নিয়ে নিজের ছেঁড়া জামা পড়া একটি ছবি পোস্ট করে ভুক্তভোগী তরুণী লিখেছেন, “এই যে আমার ছেঁড়া জামাটা দেখতেছেন, এটাই আপনাদের বাংলাদেশ। এই দেশে মেয়েদের মলেস্ট হওয়া, হ্যারাস হওয়া, রেপ হওয়া, গালি খাওয়া স্বাভাবিকভাবে মেনে থাকতে পারলে থাকেন, নাইলে এই রাগে দুঃখে ট্রমাটাইজ হয়ে সুইসাইড করেন, মরে যান, যা খুশি করেন কিন্তু প্রতিরোধ কিংবা বিচারের আশা কইরেন না।”
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই তরুণী আরও লিখেছেন, “একটা লোক বাইক নিয়ে রিকশার পেছন থেকে এসে আমার বুক খামচে টেনে জামা ছিঁড়ে আমাকেই গালাগাল করতে করতে চলে গেল। আশেপাশে একটা পুলিশ নাই, একটা মানুষ এসে ধরল না, আমার চিৎকার শুনে। আমি কিচ্ছু করতে পারলাম না। আমার শরীর এখনো কাঁপতেছে ভয়ে। আমার সঙ্গে এমনটা কেন হলো?”
“কখনও ভাবি নাই আমার ঢাকা শহরে আমার সঙ্গেই এমন কিছু হতে পারে। একটা মানুষ আগায় আসলো না। একটা মানুষও না। এই দেশে থাকতে চাইলে বিনিময়ে রাস্তাঘাটে গায়ে হাত দেওয়ার পারমিশন দিতে হবে? নাকি এখন সন্ধ্যার পর বাসার বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দেবো? আর কারে গিয়ে বললে একটু স্বাভাবিক সিকিউরভাবে এদেশে বাঁচতে পারবো?”
এর আগে গত ১৮ মে নরসিংদী রেলস্টেশনে “অশালীন পোশাক” পরার অপবাদ দিয়ে এক তরুণীকে হেনস্থা করা হয়, পরদিন যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনা আলোচনায় আসার পর এক নারীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নরসিংদীর ওই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে হেনস্থা হওয়া তরুণী লিখেছেন, “…কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতে শুনতে বাসায় ফিরতেছিলাম। আমার এই ড্রেসে ঠিক কী খারাপ ছিল যার কারণে এমন ঘটনা ঘটলো? পোশাকের দোষ দেওয়া মানুষগেুলো সালোয়ার কামিজে একটা মেয়েকে কী নিয়ে দোষ দেবে?”