যারা বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন, তাদের জন্য দেশে টাকা ফিরিয়ে আনা এখনই মোক্ষম সময়। কারণ, পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না— জানিয়েছেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
শুক্রবার (১০ জুন, ২০২২) বাংলাদেশের রাজধানীর ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে বাজেটোত্তর এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থপাচার করে পি কে হালদার ভালো অবস্থায় নেই। যে টাকা নিয়ে গেছেন, ভারত সরকার বলেছে ফেরত দেবে। হালদারকেও বের করে দেবে। তাকে দেশে আনা হবে। কানাডাও বলেছে, যারা টাকা নিয়ে গেছে তাদের বাড়ি-ঘর কেনা বন্ধ। এখন সেখানে টাকা নিয়ে যাওয়াও বন্ধ। তাই আমি মনে করি, যারা টাকা নিয়ে গেছে তাদের জন্য এখনই মোক্ষম সময় টাকা ফিরিয়ে আনার।
অনেকে না জেনেও টাকা নিয়ে গেছে— জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন সেই টাকা সাদা করে মূল ধারায় আনতে পারব। আমি বিশ্বাস করি এ সুযোগ সবাই নেবে।
টাকার একটা ধর্ম আছে, একটা বৈশিষ্ট্য আছে— উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, টাকা যেখানে বেশি সুখ, বিলাস পায় সেখানে চলে যায়। টাকা কেউ সুটকেসে করে পাচার করে না। বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পাচার হয়। সেই জায়গা থেকে আমরা দায়িত্ব নিয়েই এ কাজটা করতে যাচ্ছি।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘জার্মানি, ফ্রান্সসহ অনেক দেশ তাদের পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার সুযোগ দিয়েছে। বিশ্বে কখনও কখনও টাকা পাচার হয়ে যায়। পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়ে আপনারা বাধা দিয়েন না। এ টাকা ফেরত আনতে না পারলে তো কোনো লাভ নেই। টাকা পাচার আসলে বিভিন্ন কারণে হয়ে যায়। কিন্তু প্রমাণ ছাড়া সেগুলো বলা যায় না। পাচার নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ আসে। সেগুলোর সত্যতা পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেই। এখনও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এমনকি তাদের অনেকেই জেলে আছেন।’
তিনি আরও বলেন, মিডিয়াতে পাচার নিয়ে একটি রিপোর্ট হলেই তাকে ধরে ফেলা যায় না বা আমরা বিচার কাজ হাতে নিতে পারি না। আমাদের নিজস্ব সিস্টেম আছে। আমরা জানি সুইজারল্যান্ডে টাকা আছে। কিন্তু সেটা বললেই তো আর বিচার কাজ শুরু করে দিতে পারি না। পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়েই কাজ করতে হয়। ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের মাধ্যমেই আমাদের অ্যাকশনে যেতে হয়।
অর্থপাচার রোধে করণীয় প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবসময় ধর্মের কাছেই ফিরে আসতে হবে। ধর্মের কথা শুনে যদি মানুষ একটু নরম হয়। ইসলাম ধর্মে নবী মুহাম্মদ স্পষ্ট করে বলেছেন, যে ঘুষ দেয় আর নেয়, দুজনের জায়গাই জাহান্নামে। আমরা জাহান্নামে যাওয়ার কাজ না করি।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, পাচার করা টাকা বলতে আমরা বলি বিদেশে অর্জিত আয়। টাকা পাচার রোধে আমাদের আইন আছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এটি নিয়ে কাজ করে। এটি তাদের প্রতিদিনের কাজ। টাকা কীভাবে পাচার হয়, কারা করে— সেসব তথ্য-উপাত্ত তারা সংগ্রহ করে।
তিনি বলেন, যে টাকাগুলো পাচার হয়েছে, আমরা সেগুলো আনার চেষ্টা করছি। যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৭টি দেশ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে টাকা ফেরত নিয়ে এসেছে। আমরাও সেই কাজটি করতে যাচ্ছি।