রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখসমরে প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০ সেনাসদস্য হারাচ্ছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পদোলিয়াক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে নিজেই এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেছেন, পূর্ব ডনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার সাথে সামরিক শক্তির ভারসাম্য আনতে ইউক্রেনের শত শত পশ্চিমা অস্ত্র ও আর্টিলারি সিস্টেমের প্রয়োজন। মস্কোর সঙ্গে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু করতে কিয়েভ প্রস্তুত নয় বলেও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির এই উপদেষ্টা বলেছেন। শুক্রবার (১০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক চলা রাশিয়ার সর্বাত্মক এই হামলা গত মাসেই গড়িয়েছে চতুর্থ মাসে।
রাশিয়া অবশ্য তিনমাস ধরে সামরিক অভিযান চালালেও রুশ সেনারা প্রাথমিকভাবে প্রায় পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে হামলা পরিচালনা করে। তবে পরে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মূল মনোযোগ দেয় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়। মূলত তখন থেকে এই অঞ্চলে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে রুশ সেনারা।
আরও স্পষ্ট করে বললে, রুশ-ভাষী মানুষকে রক্ষা এবং রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষার কথা বলে দোনেতস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত ডনবাস ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। আর এতেই রুশ সেনাদের ব্যাপক গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে ইউক্রেনের এই শিল্প এলাকা।
ক্রেমলিন বলেছে, তারা এখন ইউক্রেনের বিচ্ছিন্ন ডনবাস অঞ্চলকে সম্পূর্ণরূপে ‘মুক্ত’ করতে চাইছে। আর তাই রাশিয়ান বাহিনী পুরো ডনবাসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করায় ইউক্রেনীয় সেনারা মস্কোর নিরলস বোমাবর্ষণের মধ্যে রয়েছে।
পদোলিয়াক বিবিসিকে বলছেন, রাশিয়ার গোলাবর্ষণ ঠেকাতে এবং তাদের শক্তির সাথে পাল্লা দিতে বিভিন্ন পাল্লার রকেট ছুঁড়তে সক্ষম এমন অন্তত ৩০০ সমরাস্ত্র তাদের দরকার।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ান বাহিনী সামনের দিকে অ-পারমাণবিক সবকিছু নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে ভারী কামানের গোলাবর্ষণ, একাধিক রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা এবং বিমান চলাচলও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে আরও অস্ত্রের জন্য কিয়েভের আবেদনের পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে ‘অসমতার’ কারণেই ইউক্রেনের সেনা হতাহতের ঘটনা বেশি হচ্ছে।
অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্বীকার করেছেন, পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস অঞ্চলে তারা রাশিয়ার দিক থেকে বেশ তীব্র আক্রমণের মুখে আছেন এবং প্রতিদিন তাদের অন্তত ১০০ থেকে ২০০ সৈন্য লড়াইয়ে নিহত হচ্ছে। আহত হচ্ছে প্রতিদিন পাঁচশোর মতো সৈন্য।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী অলেক্সি রেজনিকভ বলেছেন, পোল্যান্ডের কাছ থেকে তারা যে বিশেষ ধরনের হাউয়িৎযার কামান পেয়েছেন তা যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য এখন অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের পাশাপাশি তৈরি রাখা হয়েছে। কিন্তু তার দাবি, তাদের জরুরি ভিত্তিতে এবং দ্রুত আরও ভারী অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োজন।