পটুয়াখালীর গলাচিপায় বিয়েবাড়িতে তরুণীর সঙ্গে কথা বলায় দুই যুবককে ন্যাড়া করে মাথায় আলকাতরা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য সায়েম গাজীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (০৭ জুন) বিকেলে গলচিপা উপজেলার চর বিশ্বাস ইউনিয়নের চর মহিউদ্দিন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের চর আগস্তির নূরু সরদারের মেয়ে মুক্তার বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। চর মহিউদ্দিন নমো স্লুইসগেট সংলগ্ন আবাসনে বিয়ের অনুষ্ঠানের খাবার খাওয়ানো হয়। এ সময় বিয়েবাড়িতে যায় তুহিন ও কালু গাজী নামে দুই যুবক। দুপুরে খাবার খাওয়ার পরে তারা পার্শ্ববর্তী গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে কথা বলে। বিষয়টি বিয়েবাড়ির লোকজনের মধ্যে জানাজানি হলে মেয়ের ভাই ও স্থানীয়রা দুই যুবককে ধরে ইউপি সদস্য মো.সায়েম গাজীর অস্থায়ী কার্যালয় নমো স্লুইসগেট বাজারে নিয়ে যায়।
পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জনসম্মুখে ইউপি সদস্য সায়েম গাজীর নির্দেশে মাথা ন্যাড়া করে আলকাতরা মাখিয়ে গ্রামছাড়া করে। লোকলজ্জার ভয়ে পালিয়ে ছিল দুই যুবক। পরে পরিবারের লোকজন তাদের উদ্ধার করে।
ভুক্তভোগী দুই যুবক বলেন, ‘ওই মেয়ে আমাদর পূব পরিচিত ছিল। তাই বিয়েবাড়িতে তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছিলাম। এটা দেখে মেয়ের বড় ভাইসহ আরও কয়েকজন আমাদের ধরে সায়েম গাজীর কাছে নিয়ে যায়। তারা আমাদের মারধর করে মাথার চুল কামিয়ে আলকাতরা লাগিয়ে গ্রামছাড়া করে। আমরা লোকলজ্জার ভয়ে এখন পালিয়ে থাকি। আমরা সমাজে কিভাবে বাঁচব? আমাদের ভবিষ্যৎ কী?’
ভূক্তভোগী যুবক কালুর বাবা মো. লিটন গাজী বলেন,‘আমার ছেলে এমন কী অপরাধ করেছে যার কারণে তার মাথা ন্যাড়া করে আলকাতরা দিয়েছে? যদি অপরাধ করে থাকে তার জন্য দেশে প্রচলিত আইনকানুন আছে। তবে এটা কোন ধরনের বিচার? ন্যাড়া করে মাথায় আলকাতরা দিয়ে গ্রামছাড়া করল। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
মেয়ের ভাই বলেন, ওরা মোবাইলে বিভিন্ন সময় বিরক্ত করত। বিয়েবাড়িতে তাদের পেয়ে আমরা মেম্বারের কাছে নিয়ে গেলে সালিসের মাধ্যমে সেলুন থেকে মেশিন দিয়ে তাদের ন্যাড়া করে সতর্ক করা হয়েছে। তবে আলকাতরা কে বা কারা লাগিয়েছে আমার জানা নেই ।
ন্যাড়া করার বিষয়ে স্থানীয় ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. হাসান সরদার বলেন,‘কোন আইনে একজন ইউপি সদস্য
জনসম্মুখে দুইজন যুবকের মাথা ন্যাড়া করে আমার জানা নাই। ঘটনার পর ওই দুই যুবক লোকলজ্জায় বনে লুকিয়ে ছিল। তার বাবা ও স্থানীয় জনসাধারণ তাকে পাশের একটি জঙ্গল থেকে সকালে বাড়িতে নিয়ে আসে। তারা এ লজ্জাজনক ঘটনায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। যেকোনো সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। তাই যারা এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
অভিযুক্ত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবু সায়েমকে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কোন সালিস বৈঠক হয়নি। আমি কারও মাথা ন্যড়া করে দেয়নি। আর যদি এমনটি হয়ে থাকে তবে তার ভিডিও ফুটেজ কোথায়?’
গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’