ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শততম দিনে গড়িয়েছে। ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার বাহিনীগুলো এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রায় ২০% অঞ্চল দখল করে নিয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, যুদ্ধের প্রথম ১০০ দিন শিশুদের জন্য একটি বিধ্বংসী পরিণতির দিকে নিয়ে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন দৃশ্য আর দেখা যায়নি।
ইউক্রেনের প্রধান প্রসিকিউটরের অফিস বুধবার (১ জুন) জানিয়েছে, রাশিয়ার হামলায় কমপক্ষে ২৪৩ শিশু মারা গেছে। রুশ বাহিনীর হাতে আরও ৪৪৬ শিশু আহত হয়েছে।
জাতিসংঘের ধারণা, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইউক্রেনে কমপক্ষে ৪,১৪৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৪,৯৪৫ জন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মতে, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে প্রতি ছয় জনের মধ্যে একজন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ ধরনের বাস্তুচ্যুত মানুষের মোট সংখ্যা ৭৭ লাখ।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, ৬৮ লাখেরও বেশি মানুষ অন্যদেশে পালিয়েছে।
ইউক্রেন দাবি করে, যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ২৪,২০০ রুশ সেনা নিহত হয়েছে। রাশিয়ান এবং ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে মোট চার দফায় মুখোমুখি আলোচনায় বসেছে। এর মধ্যে তিন দফায় বেলারুশে এবং এক দফা তুরস্কে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলারুশে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উভয়পক্ষই বিরোধপূর্ণ অঞ্চল থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য মানবিক করিডোর বাস্তবায়নের বিষয়ে সম্মত হয়।
পরে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়্যেব এরদোয়ানের মধ্যস্থতায় ২৯ মার্চ ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনায় রাশিয়ান পক্ষের কাছে একটি খসড়া চুক্তির ব্যাপারে তাদের নীতিগত অবস্থান স্পষ্ট করে।
বিশেষ সামরিক অভিযানের নামে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি এই যুদ্ধ শুরু হয়। অন্যদিকে কিয়েভের পাশে দাঁড়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে সরকার বদলে দিতে চায়।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়ার একাধিক ব্যাংককে বিশ্বের প্রধান আর্থিক লেনদেনকারী পরিষেবা সুইফট থেকে বাদ দিতে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রবাহ থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা তথা দেশটির অর্থনৈতিক খাতকে পঙ্গু করে দিতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এদিকে, রাশিয়ার বেসামরিকৃ বিমানের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের আকাশসীমা ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়।
যুদ্ধাবস্থার মধ্যেই রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনার জন্য রাশিয়ার একটি প্রতিনিধি দল বেলারুশে পৌঁছেছে। তার ওই ঘোষণার একদিনের মাথায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের আবেদন করে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর জন্য ৫৫৪ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজও অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, প্রথমবারের মতো আক্রমণের মুখে থাকা একটি দেশকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য তহবিল দেবে তার জোট।