শশা খাবেন? কচি শশা, নুন মাখিয়ে দেওয়া। দশ টাকা, মাত্র দশ টাকা।
নীলু রায়চক বাসের গেটে উঠে বারবার বলতে থাকে। যাত্রীবোঝাই বাস দাঁড়িয়ে আছে,আমতলার চারমাথার মোড়ে, গাছতলায়।
প্রচন্ড গরমে সবাই হাঁসফাঁস করছে। রোদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
বাস না ছাড়লে অস্বস্তি আরও বেশি। একটু হলেও হাওয়া লাগে। কষ্ট কম হয়।
মাথায় টুপি পরা দাড়িওয়ালা এক চাচা নীলুকে বলল, একটা শশা ছাড়িয়ে ভাল করে ধুয়ে দে। নুনটা একটু কম দে।
নীলু মাথা নাড়ে। ছুরি দিয়ে চটপট শশা ছাড়িয়ে দেয়।
আর বলতে থাকে, শশা। কচি শশা। নুন মাখিয়ে দেব। এই গরমে আরাম পাবে, দাদা। কচি শশা। দেব নাকি?
ড্রাইভার গেছে পাশের ভাতের হোটেলে। গাড়ি ছাড়তে দশ-পনেরো মিনিট তো দেরি হবেই। নীলু ভাবল, এই সুযোগে আরও কয়েকটা শশা বিকোতে পারলে সারাদিনে দু-তিনশো টাকা বাচ্চিত হয়ে যাবে। গরম কমে গেলে আবার আমলকি, ছোলা ভাজা, বাদাম ভাজা নিয়ে বাসে উঠতে হবে। একমুঠো ভাত কোনোরকম জুটে যাবে।
বাসের পিছনের দিকে একটা বছর সাতেকের ছেলে বায়না ধরেছে, শশা খাবে। তার বাবা বলছে, একদম না। রাস্তার খাবার। সে বলছে, জল দিয়ে তো ধুয়ে দেবে।
নীলু তো হেঁকেই যাচ্ছে। কচি শশা। কচি শশা।
লোকটার সব রাগ যেন নীলুর ঘাড়ে এসে পড়ল।
ঘাড় ধরে নামিয়ে দোব। লাটসাহেবি হচ্ছে। দেখছিস না, বাচ্চা কাঁদছে।
নেমে যা বাস থেকে। একদম নেমে যা। যাঃ যাঃ নেমে যা।
নীলু থতমত খেয়ে নেমে যাচ্ছে। একটা কথা বলেনি। সে বুঝতেই পারেনি কি তার ভুল, কিছু বলার মতো কথাও সে পায়নি।
গেটের বামদিকে কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে বছর চল্লিশের রাজীব বসেছিলেন। কলেজের মাস্টারমশাই। তিনি বাচ্চাটির বাবার ব্যবহারে আশ্চর্য হলেন। তিনিও আকস্মিক সিট থেকে উঠে পড়লেন। বেশ জোরে চেঁচিয়ে নীলুকে বললেন, ভাই আপনি নামবেন না। প্রয়োজন হলে উনি নেমে যাবেন। বাসে শশা নিয়ে উঠেছে, খুব অন্যায় করে ফেলেছে। ছুরি দিয়ে শশা না ছাড়িয়ে পেটে ঠেকাতে পারলে তবে ভাল হবে। ছিনতাইকারী হলে তবেই ঠিক হবে। লড়াই করে বাঁচতে দেবে না। হকার বলে কি এরা মানুষ নয়। আপনি নেমে যান। যান, নেমে যান।
বাসের সবাই ততক্ষণে লোকটার বিপক্ষে চলে গেছে। সবাই ওই লোকটাকে বাস থেকে নেমে যেতে বলছে। পরিস্থিতি দেখে লোকটা ঠান্ডা বরফ হয়ে ক্ষমা চাইছে। হাতজোড় করে ভুল স্বীকার করছে।
মাস্টারমশাই আর কিছু বলবার প্রয়োজন বোধ করলেন না, নিজের সিটে বসে পড়লেন।
বাসের প্রচন্ড হট্টগোলে বাচ্চাটা কাঁদতে শুরু করল। নীলুর চোখে জল, মাস্টারমশাইকে কি বলবে, সে বুঝতে পারছে না।
ড্রাইভার গাড়িতে স্টার্ট দিয়েছে, কন্ডাক্টর বলছে, ধর্মতলা.. ধর্মতলা..