ধর্মতলা

অবশেষ দাস
অবশেষ দাস
3 মিনিটে পড়ুন

শশা খাবেন? কচি শশা, নুন মাখিয়ে দেওয়া। দশ টাকা, মাত্র দশ টাকা।
নীলু রায়চক বাসের গেটে উঠে বারবার বলতে থাকে। যাত্রীবোঝাই বাস দাঁড়িয়ে আছে,আমতলার চারমাথার মোড়ে, গাছতলায়।
প্রচন্ড গরমে সবাই হাঁসফাঁস করছে।‌ রোদের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।
বাস না ছাড়লে অস্বস্তি আরও বেশি। একটু হলেও হাওয়া লাগে। কষ্ট কম হয়।
মাথায় টুপি পরা দাড়িওয়ালা এক চাচা নীলুকে বলল, একটা শশা ছাড়িয়ে ভাল করে ধুয়ে দে। নুনটা একটু কম দে।

নীলু মাথা নাড়ে। ছুরি দিয়ে চটপট শশা ছাড়িয়ে দেয়।
আর বলতে থাকে, শশা। কচি শশা। নুন মাখিয়ে দেব। এই গরমে আরাম পাবে, দাদা। কচি শশা। দেব নাকি?
ড্রাইভার গেছে পাশের ভাতের হোটেলে। গাড়ি ছাড়তে দশ-পনেরো মিনিট তো দেরি হবেই। নীলু ভাবল, এই সুযোগে আরও কয়েকটা শশা বিকোতে পারলে সারাদিনে দু-তিনশো টাকা বাচ্চিত হয়ে যাবে। গরম কমে গেলে আবার আমলকি, ছোলা ভাজা, বাদাম ভাজা নিয়ে বাসে উঠতে হবে।‌ একমুঠো ভাত কোনোরকম জুটে যাবে।

বাসের পিছনের দিকে একটা বছর সাতেকের ছেলে বায়না ধরেছে, শশা খাবে। তার বাবা বলছে, একদম না। রাস্তার খাবার। সে বলছে, জল দিয়ে তো ধুয়ে দেবে।
নীলু তো হেঁকেই যাচ্ছে। কচি শশা। কচি শশা।
লোকটার সব রাগ যেন নীলুর ঘাড়ে এসে পড়ল।

ঘাড় ধরে নামিয়ে দোব। লাটসাহেবি হচ্ছে। দেখছিস না, বাচ্চা কাঁদছে।
নেমে যা বাস থেকে। একদম নেমে যা। যাঃ যাঃ নেমে যা।
নীলু থতমত খেয়ে নেমে যাচ্ছে। একটা কথা বলেনি। সে বুঝতেই পারেনি কি তার ভুল, কিছু বলার মতো কথাও সে পায়নি।

- বিজ্ঞাপন -

গেটের বামদিকে কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে বছর চল্লিশের রাজীব বসেছিলেন। কলেজের মাস্টারমশাই। তিনি বাচ্চাটির বাবার ব্যবহারে আশ্চর্য হলেন। তিনিও আকস্মিক সিট থেকে উঠে পড়লেন। বেশ জোরে চেঁচিয়ে নীলুকে বললেন, ভাই আপনি নামবেন না। প্রয়োজন হলে উনি নেমে যাবেন। বাসে শশা নিয়ে উঠেছে, খুব অন্যায় করে ফেলেছে। ছুরি দিয়ে শশা না ছাড়িয়ে পেটে ঠেকাতে পারলে তবে ভাল হবে। ছিনতাইকারী হলে তবেই ঠিক হবে। লড়াই করে বাঁচতে দেবে না। হকার বলে কি এরা মানুষ নয়। আপনি নেমে যান। যান, নেমে যান।

বাসের সবাই ততক্ষণে লোকটার বিপক্ষে চলে গেছে। সবাই ওই লোকটাকে বাস থেকে নেমে যেতে বলছে।‌ পরিস্থিতি দেখে লোকটা ঠান্ডা বরফ হয়ে ক্ষমা চাইছে। হাতজোড় করে ভুল স্বীকার করছে।
মাস্টারমশাই আর কিছু বলবার প্রয়োজন বোধ করলেন না, নিজের সিটে বসে পড়লেন।
বাসের প্রচন্ড হট্টগোলে বাচ্চাটা কাঁদতে শুরু করল। নীলুর চোখে জল, মাস্টারমশাইকে কি বলবে, সে বুঝতে পারছে না।‌

ড্রাইভার গাড়িতে স্টার্ট দিয়েছে, কন্ডাক্টর বলছে, ধর্মতলা.. ধর্মতলা..

গুগল নিউজে সাময়িকীকে অনুসরণ করুন 👉 গুগল নিউজ গুগল নিউজ

এই নিবন্ধটি শেয়ার করুন
জন্ম: দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা। বাবা গৌরবরণ দাস এবং মা নমিতা দেবী। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পাশাপাশি তুলনামূলক ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা। দুটোতেই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। এছাড়া মাসকমিউনিকেশন নিয়েও পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বিদ্যানগর কলেজের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক। প্রথম লেখা প্রকাশ 'দীপশিখা' পত্রিকার শারদ সংখ্যায়। তাঁর কয়েকটি কবিতার বই: মাটির ঘরের গল্প ( ২০০৪), কিশোরবেলা সোনার খাঁচায় (২০১৪), হাওয়ার নূপুর (২০২০) সহ অজস্র সংকলন ও সম্পাদিত গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার আগেই তিনি একজন প্রতিশ্রুতিমান কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। কবিতা চর্চার পাশাপাশি প্রবন্ধ ও কথাসাহিত্যের চর্চা সমানভাবে করে চলেছেন। কবি দুই দশকের বেশি কাল ধরে লেখালেখি করছেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও সংকলনে। বেশকিছুদিন সম্পাদনা করেছেন ছোটদের 'একতারা' সাহিত্য পত্রিকা। এছাড়া আমন্ত্রণমূলক সম্পাদনা করেছেন বহু পত্র-পত্রিকায়। তিনি গড়ে তুলেছেন শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক দুটি অন্যধারার প্রতিষ্ঠান 'বাংলার মুখ' ও মেনকাবালা দেবী স্মৃতি সংস্কৃতি আকাদেমি।' তাঁর গবেষণার বিষয় 'সুন্দরবনের জনজীবন ও বাংলা কথাসাহিত্য।' পাশাপাশি দলিত সমাজ ও সাহিত্যের প্রতি গভীরভাবে মনোযোগী। ফুলের সৌরভ নয়, জীবনের সৌরভ খুঁজে যাওয়া কবির সারা জীবনের সাধনা। সবুজ গাছপালাকে তিনি সন্তানের মতো ভালবাসেন। সুন্দরবন তাঁর কাছে আরাধ্য দেবী। সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন অজস্র পুরস্কার ও সম্মান: সুধারানী রায় স্মৃতি পুরস্কার (২০০৪), বাসুদেব সরকার স্মৃতি পদক (২০০৬), রোটারি লিটারেচার অ্যাওয়ার্ড (২০০৬), ১০০ ডায়মণ্ড গণসংবর্ধনা (২০০৮), পাঞ্চজন্য সাহিত্য পুরস্কার (২০১০), শতবার্ষিকী সাহিত্য সম্মাননা (২০১১), এশিয়ান কালচারাল লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড (২০১৪), ডঃ রাধাকৃষ্ণন সম্মাননা (২০১৫), ডি.পি.এস.সি. সাহিত্য সম্মাননা (২০১৮), আত্মজন সম্মাননা (২০১৯), বিবেকানন্দ পুরস্কার (২০১৯), দীপালিকা সম্মাননা (২০১৯), সংহতি সম্মাননা (২০২০), সুকুমার রায় পুরস্কার (২০২০)।
একটি মন্তব্য করুন

প্রবেশ করুন

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন?

আপনার অ্যাকাউন্টের ইমেইল বা ইউজারনেম লিখুন, আমরা আপনাকে পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার জন্য একটি লিঙ্ক পাঠাব।

আপনার পাসওয়ার্ড পুনরায় সেট করার লিঙ্কটি অবৈধ বা মেয়াদোত্তীর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

প্রবেশ করুন

Privacy Policy

Add to Collection

No Collections

Here you'll find all collections you've created before.

লেখা কপি করার অনুমতি নাই, লিংক শেয়ার করুন ইচ্ছে মতো!