নরসিংদীর রেলস্টেশন এলাকায় জিন্স ও টপস পরায় তরুণীকে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনের ২০ জন সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছেন। মূলত শান্তিপূর্ণভাবে জনপরিসরে শরীর ও পোশাকের স্বাধীনতার জায়গা পুনরুদ্ধারেই তাদের এ যাত্রা।
শুক্রবার (২৭ মে) সকালে ঢাকা থেকে তারা নরসিংদী স্টেশনে যান বলে জানিয়েছেন অগ্নি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সভাপতি তৃষিয়া নাশতারান।
তৃষিয়া নাশতারান বলেন, “গত ১৮ মে নরসিংদী স্টেশনে একজন নারী পোশাকের কারণে কুৎসিত আক্রমণ ও সহিংসতার শিকার হন। আমরা তার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছি। তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আজ আমরা ২০ জন গিয়েছিলাম নরসিংদী স্টেশনে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা জায়গাটা ও সেখানকার মানুষগুলোকে দেখতে গেছি, তাদের সঙ্গে মানবিক যোগাযোগ স্থাপন করতে গিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণভাবে জনপরিসরে শরীর ও পোশাকের স্বাধীনতার জায়গা রিক্লেইম করা। আমাদের বৈচিত্র্যময় শারীরিক উপস্থিতিই আমাদের বক্তব্য।”
যে ২০ জন নরসিংদী রেলস্টেশনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন, তারা হলেন- তৃষিয়া, সুরভী, এ্যানি, আনোয়ার, অর্ণব, নুভা, মম, অপরাজিতা, সামিহা, সানজানা, স্মিতা, লক্ষ্মী, অন্তরা, মিশু, প্রমি, জিসা, নিশা, বিজু, ইফফাত, নীল।
আপনারা কোন সংগঠনের সদস্য, জানতে চাইলে তৃষিয়া বলেন, “এখানে আমরা বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। আজকের প্রতিবাদটিতে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তারা অগ্নি ফাউন্ডেশনের নারীবাদী গ্রাসরুটস অর্গানাইজিং প্ল্যাটফর্ম মেয়ে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত। অগ্নিযাত্রা অগ্নি আমাদের স্টোরিটেলিং প্রকল্প। আমাদের ঢাকা-নরসিংদী যাত্রা সেটারই একটা অংশ।”
অগ্নি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সভাপতি আরও বলেন, “পরিচয়ে আমরা মানুষ, নারীবাদী, শিল্পী, সংগঠক, নাট্যকর্মী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, আলোকচিত্রী, গবেষক, উন্নয়নকর্মী, প্রকৌশলী এবং আরও অনেক কিছু।”
নরসিংদী স্টেশনের যাওয়ার অভিজ্ঞতা বিষয়ে তৃষিয়া বলেন, “জায়গাটা দেখলাম। মানুষগুলোকে শুনলাম। আজ রাত ১১টায় মেয়ে নেটওয়ার্কের ফেসবুক পেজে আমরা লাইভ আলোচনা করব আজকের অভিজ্ঞতা আর পর্যবেক্ষণ নিয়ে। সেখানে বিস্তারিত জানতে পারবেন।”
“অশালীন পোশাক পরার অপবাদে” গত ১৮ মে বেলা ১১টার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা এক তরুণীকে লাঞ্ছিত করা হয়। ঘটনার একদিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি সামনে আসে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণীকে টানা-হেঁচড়া করছে এক নারী ও কয়েকজন যুবক। এক তরুণ মেয়েটিকে আগলে রাখার চেষ্টা করছে। এক পর্যায়ে কয়েকজন লোকের সহায়তায় মেয়েটি দৌড়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে ঢুকে যান। এরপর ঘরের কলাপ্সিবল গেট টেনে দেয় এক লোক।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতে রেলস্টেশন এলাকায় সদর থানা ও ডিবি পুলিশের চালানো যৌথ অভিযানে ইসমাইল হোসেন নামে এক যুবককে স্টেশন এলাকা থেকে আটক করা হয়। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার পর তা দেখে ইসমাইলকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাটি তদন্তে মাঠে নেমেছে।