বাংলাদেশে নতুন প্রজাতির তিমির সন্ধান মিলেছে। হাঙরের মতো দেখতে এবং বেশিরভাগ ডলফিনের চেয়ে আকারে কিছুটা ছোট এই তিমিটি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি কুয়াকাটা ডলফিন সংরক্ষণ কমিটির এক সদস্য সমুদ্রসৈকতের কাছে আটকে পড়া একটি বামন কোগিয়া প্রজাতির তিমির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করলে নতুন এই প্রজাতিটি আবিষ্কার করা হয়।
জানা গেছে, বিজ্ঞানীদের কাছে “কোগিয়া ব্রেভিসেপস” নামে পরিচিত এই তিমিটি জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায়। স্থানীয়রা প্রাণীটিকে সমুদ্রে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও স্রোতের কারণে বার বার তীরে ফিরে আসে সেটি এবং প্রায় দুই ঘণ্টা পর মারা যায়।
পরবর্তীতে তিমিটির ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশে প্রথম এই প্রজাতির তিমি শনাক্ত করা হয়।
বাংলাদেশ ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডাব্লিউসিএস) সদস্য নাদিম পারভেজ বলেন, “কুয়াকাটা ডলফিন সংরক্ষণ কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরা তিমিটির বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে। তাদের প্রকাশ করা ছবিগুলো দেখে আমরা সবাই বিস্মিত হয়েছিলাম। তিমিটি দেখতে প্রায় হাঙরের মতো। এটির মাথা বর্গাকার, নাকের বর্ধিতাংশ সামনের দিকে অভিক্ষিপ্ত এবং মাথার পাশে নকল ফুলকাছিদ্রের মতো দেখতে একটি সাদা দাগ ছিল।”
তিমির দৈহিক এই গঠনটি মোটেও কাকতালীয় বিষয় নয় বলে তিনি জানান। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যবহার করে বামন কোগিয়ারা তাদের শিকারি প্রাণী যেমন- ঘাতক তিমি ও বড় হাঙরদের সামনে হাঙর সেজে তাদের বোকা বানায়। নকল ফুলকাছিদ্রের মতো দাগ ছাড়াও বামন কোগিয়া তিমির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এদের পেটের ভেতরে অন্ত্রের সঙ্গে লালচে-বাদামি তরল দিয়ে ভরা একটি ছোট থলি সংযুক্ত থাকে। শিকারিদের উপস্থিতিতে এরা থলি থেকে তরল পদার্থ পানিতে ছুঁড়ে দিয়ে নিজেদের আড়াল করে। বিষয়টা কিছুটা অক্টোপাসের মতো।
নাদিম পারভেজ আরও জানান, যেহেতু এরা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রাকৃতির তিমি, তাই অন্যান্য বিশালাকার তিমির মতো আকার দিয়ে এরা শিকারি প্রাণীদের ভয় দেখাতে পারে না।
তিনি বলেন, বিশ্বে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৯০টিরও বেশি প্রজাতির সেটেশানদের মধ্যে বামন কোগিয়া তিমি একটি। সেটেশানরা আমাদের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী। তারা সারাজীবন পানিতে কাটায় এবং বাতাস থেকে শ্বাস নেয়। তবে অন্যান্য সেটেশানদের মতো এরা শিকারকে চিবিয়ে না খেয়ে সম্পূর্ণ গিলে ফেলে।
আশ্চর্যজনকভাবে সৈকতে পাওয়া গর্ভবতী এই বামন কোগিয়া তিমির পেটে দুটি বাচ্চা ছিল। সেটেশানদের মধ্যে এই ঘটনা অত্যন্ত বিরল, কারণ সেটেশানরা সাধারণত প্রতিবারে একটি বাচ্চা জন্ম দেয়।
তিনি জানান, সব সেটেশানদের একটি শক্তিশালী লেজপাখনা থাকে যা ফ্লুক নামে পরিচিত। সেটেশানরা লেজপাখনা উপরে-নিচে নাড়ানোর মাধ্যমে সামনের দিকে চলে, দুইটি পার্শ্বপাখনা ব্যবহার করে সাঁতার কাটে এবং পিঠপাখনা ব্যবহার করে দেহের ভারসাম্য ও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
বাংলাদেশ ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির (ডাব্লিউসিএস) সদস্য মো. রাসেল মিয়া বলেন, “বাংলাদেশে শনাক্ত করা এই বামন কোগিয়া তিমিটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গভীর সমুদ্রে থাকা এই প্রাণীটি সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি। যদিও, বাংলাদেশের সমুদ্রে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ডাব্লিউসিএস পরিচালিত গবেষণার সময় এই প্রজাতিটি কখনও দেখা যায়নি, তবে বামন কোগিয়া তিমি আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি পরিমাণে থাকতে পারে।”