অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের মামলায় ভারতে গ্রেপ্তার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) পলাতক ১০ জনের বিরুদ্ধে গেজেট প্রকাশের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পরে তা বিজ্ঞপ্তি আকারে পত্রিকায় ছাপাতে বলা হয়েছে।
বুধবার (২৫ মে) ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন।
মামলার পলাতক আসামিরা হলেন- পি কে হালদার, তার মা লীলাবতী হালদার, ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার, পি কে হালদারের সহযোগী অমিতাভ অধিকারী, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালামের বরাতে দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইনে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, ‘‘এই মামলায় পি কে হালদারসহ ১০ জন আসামি পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে আদালত আগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। আজ (বুধবার) আদালত ওই ১০ জনের নাম উল্লেখ করে গেজেট প্রকাশ করে পত্রিকায় ছাপাতে আদেশ দিয়েছেন।’’
সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মামলায় গত জানুয়ারি মাসে পি কে হালদার, তার মা, ভাই, নিকটাত্মীয়সহ ১৪ জনের নামে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুদক। তাদের মধ্যে পি কে হালদারের মামাতো ভাই শঙ্খ ব্যাপারী, ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা ও অবন্তিকা বড়াল গ্রেপ্তার হন। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সম্প্রতি পি কে হালদারসহ পাঁচজন কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পি কে হালদার নামে-বেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৯৩৩ কোটি টাকার জমি, ফ্ল্যাট ও হোটেল কিনেছেন। এ ছাড়া তিনি কানাডায় পাচার করেছেন প্রায় ৮০ কোটি টাকা। পি কে হালদার মাত্র ১০ বছরের (২০০৯-১৯ সাল) ব্যবধানে এত সম্পদ গড়েছেন। তার বৈধ আয়ের পরিমাণ মাত্র ১২ কোটি টাকা।
দেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির নামে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা তুলেন। এই টাকা আর ফেরত না আসায় ওই চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। প্রতিষ্ঠান চারটি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
পি কে হালদারের এই আর্থিক কেলেঙ্কারি জানাজানি হয় ২০২০ সালের শুরুতে। আর তিনি দেশ ছাড়েন ২০১৯ সালের শেষ দিকে।
২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী। এরপর মামলাটিতে তদন্ত করে দুদক ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়।
দুদকের মামলায় অভিযোগ করা হয়, পি কে হালদার বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ দখলে রেখেছেন।