নরসিংদীর বেলাবো উপজেলায় ঋণের টাকার দায় থেকে মুক্তি পেতে ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মা ও দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন গিয়াস উদ্দিন শেখ। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হকের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৪ মে) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান।
এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, রং মিস্ত্রি গিয়াস উদ্দিন শেখ জুয়ায় আসক্ত। তিনি একজন পেশাদার জুয়াড়ি। জুয়া খেলায় টাকার সংকট হলে তার মাথা ঠিক থাকে না। ইতোপূর্বে সে জুয়া খেলে অনেক টাকা হেরে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তার স্ত্রী রহিমা বেগমের নামে ব্র্যাক, আশাসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ১২ লাখ টাকা ঋণ নেয়। এই ঋণের টাকা পরিশোধ না করতে এবং জ্যাঠাতো ভাই রেণু মিয়াকে ফাঁসাতেই সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। রেণু মিয়ার সঙ্গে বাড়ির রাস্তার সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছিল তার।
ঋণগ্রহীতা মারা গেলে ঋণের টাকা মওকুফ হয় এমন বিশ্বাসে তিনি তার স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
তিনি আরও জানান, শনিবার গভীর রাতে গিয়াস উদ্দিন শেখ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘুমন্ত স্ত্রী রহিমা বেগমকে ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে এবং ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। বাড়িতে তার অবস্থানের কথা সন্তানেরা বলে দেবে এমন আশঙ্কায় সে তার ঘুমন্ত সন্তানদেরও নির্মমভাবে হত্যা করে। এরপর সে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
পরদিন সকালে স্বজনদের মাধ্যমে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়ে বাড়ি আসে গিয়াস উদ্দিন শেখ। তখন সে রাতে বাড়িতে ছিল না বলে জানায়। এ সময় চাচাতো ভাই রেণু শেখের ওপর হত্যার দায় চাপানোর চেষ্টা করে সে।
নরসিংদীর পুলিশ সুপার আরও জানান, পিবিআই ঘটনাস্থল উপস্থিত হয়ে নানা বিষয়ে পর্যালোচনা করে। এ সময় গিয়াস উদ্দিন শেখের আচরণ তাদের কাছে সন্দেহজনক হওয়ায় তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যাবহার করা ছুরি ও ক্রিকেট ব্যাট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি-না খতিয়ে দেখছে পিবিআই।
উল্লেখ্য, রবিবার সকাল ৮টায় পাটুলী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গিয়াস উদ্দিন শেখের স্ত্রী রাহিমা বেগম (৩৫), দুই সন্তান রাব্বি শেখ (১৩) ও রাকিবা শেখের (৭) লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত রহিমা বেগমের ছোট ভাই মো. মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে বেলাবো থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। এর মধ্যে মামলাটি পিবিআইয়ে হস্তান্তর করা হয়।