জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে আগামী মাসগুলোতে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
গতকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, এই যুদ্ধ দরিদ্র দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। খাদ্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান দামের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবিলা প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক যেদিন ১২ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত তহবিল ঘোষণা করেছে, ঠিক সেদিনই জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছ থেকে সতর্কবার্তা এল।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ইউক্রেনের রপ্তানি যদি যুদ্ধ-পূর্ব পর্যায়ে ফিরিয়ে নেওয়া না যায়, তাহলে বিশ্ব দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে। এই দুর্ভিক্ষ বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে।
চলমান যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ইউক্রেন একসময় প্রচুর পরিমাণে সূর্যমুখী তেল রপ্তানি করত। পাশাপাশি দেশটি ভুট্টা-গমের মতো খাদ্যশস্য রপ্তানি করত।
চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। বিকল্প খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম গত বছরের এ সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, এই সংঘাত লাখ লাখ মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হুমকিতে ফেলতে পারে। বিশ্বে অপুষ্টি, ব্যাপকভিত্তিক ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, পৃথিবীতে এখন যথেষ্ট খাদ্য মজুত আছে। কিন্তু এখনই যদি সমস্যার সমাধান করা না হয়, তাহলে আগামী মাসগুলোতে বিশ্বকে খাদ্যসংকটের বড় ধরনের বিপদের মুখোমুখি হতে হবে।
আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেনের খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি রাশিয়া ও বেলারুশের উৎপাদিত সার যদি বিশ্ববাজারে আবার না আসে, তাহলে খাদ্যসংকটের কোনো কার্যকর সমাধান হবে না।
জাতিসংঘ মহাসচিব জানান, খাদ্য রপ্তানি স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে তিনি রাশিয়া, ইউক্রেনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন।
সমস্যার সমাধানে সব পক্ষের সদিচ্ছা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন আন্তোনিও গুতেরেস।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। সরবরাহ সংকটে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে চলছে।
চলমান এই যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)। এবার বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৪ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে সংস্থাটি।