বাগদাদ, ইরাকের রাজধানী। জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, দর্শন ও ধর্মচর্চার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই শহরটি বিশ্ব-ইতিহাসে আজও এক আলোচিত নাম। শহরটির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ইসলামী স্বর্ণযুগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই স্বপ্নময় বাগদাদ প্রতিষ্ঠা করেন খলিফা আল মনসুর। অষ্টম শতকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আব্বাসীয় খিলাফাতের পতন অবধি নগরীটি ছিল মুসলিম বিশ্বের রাজধানী। শিল্প, কলা, সাহিত্য, দর্শন, রসায়ন, ভূগোল, চিকিৎসা ও সকল জ্ঞান-বিজ্ঞানের সূতিকাগার এই অমর নগরী বাগদাদ মানব সভ্যতার অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ শহর। মুসলিম স্থাপত্য, শিল্প-সাহিত্য ও নান্দনিক ঐশ্বর্যের প্রতীক রূপে বিবেচিত হত শহরটি।
বাগদাদ গড়ে উঠেছিল ব্যতিক্রমধর্মী স্থাপত্যকলায়। এক বিরাট সুরক্ষিত দুর্গ বা প্রাসাদের আদলে নির্মিত হয় এটি। বসতির জন্য প্রথমে ইরাকের টাইগ্রিস নদীর (আরবীতে দজলা নদী) পশ্চিম তীরে এক গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়। পরে ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হতে থাকে।
বাগদাদের গঠন:
আব্বাসীয়দের রাজধানী হিসেবে বাগদাদ শহর নির্মাণ করা হয়েছিল বলেই আবহাওয়া, অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক বিবেচনায় এই স্থানটি নির্বাচন করা হয়। ঐতিহাসিক এই নগরটি নির্মিত হয় ৭৬২ খ্রিষ্টাব্দে। গোটা শহর তৈরিতে সময় লেগেছিল প্রায় চার বছর। শহরটি তৈরিতে প্রায় লাখ খানেকের মত শ্রমিক নিরন্তর শ্রম দিয়েছেন। সে সময়ের খ্যাতিমান প্রকৌশলীরা নির্মাণে অংশ নেন। বাগদাদ নির্মাণে ব্যয় হয় ৪০ লাখ দিরহাম। নির্মাণ কৌশলও অসাধারণ। শহরের চারপাশে গভীর পরিখা।
দজলার পাড়ে বাঁধানো হয় ঘাট। শহরের চারদিক ঘিরে নির্মিত হয় সুরক্ষা প্রাচীর।
প্রশস্ত সুরক্ষা প্রাচীর ছাড়াও ছিল নানারকম কৌশলী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। প্রতি গেটে প্রতিরক্ষার জন্য একটি করে গম্বুজ এবং গেটের নিচে সার্বক্ষণিক কড়া নিরাপত্তার জন্য ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। বিশাল দুর্গের ভেতরটায় ছিল খলিফার প্রাসাদ, জামে মসজিদ, দিওয়ানসমূহ, খলিফার সন্তান-সন্ততির বাসস্থান সহ নানা স্থাপনা। প্রাসাদগুলো নির্মাণে মূল্যবান পাথর ব্যবহারের পাশাপাশি প্রাসাদের দরজাগুলোতে ছিল স্বর্ণখচিত বিভিন্ন কারুকাজ।
বাগদাদের প্রবেশপথের ওপর গম্বুজবিশিষ্ট একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ছিল। ফটকের দুই প্রান্তে লোহার দরজা ছিল। ঐতিহাসিক ইয়াকুবির (মৃত্যু: ২৮৪ হিঃ/৮৯৭ খ্রিঃ) দেওয়া তথ্যানুসারে এই দরজাগুলো এতটাই ভারি ছিল, এগুলো খোলা ও বন্ধ করার জন্য অনেক লোকের প্রয়োজন হতো। অন্যান্য খলিফারাও পরবর্তীতে এতে সংস্কার ও পরিবর্তন-পরিবর্ধন করেন। ধীরে ধীরে এটি চিত্তাকর্ষক স্থাপত্যশৈলীরূপে স্বীকৃতি পায়।
ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প-সাহিত্যচর্চার কেন্দ্র হয়ে ওঠার পর বাগদাদ আরও সম্প্রসারিত হয়। বাগদাদের আরবান প্ল্যানিং বা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও শহুরে পরিকল্পনা কাঠামোতে হাট-বাজারের ভূমিকা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বহু দূরের ব্যবসায়ীরা ব্যবসার জন্য এখানে আসতেন। শহরের আনাচে-কানাচে প্রচুর মসজিদ নির্মিত হয়। তখনকার সময়ে মসজিদগুলো ধর্মীয় শিক্ষা ও গবেষণার মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের গ্রন্থসমূহ এখানেই সংরক্ষণ ও সংকলন করা হয়। দুর্লভ সব বইয়ের পাঠাগারের অবস্থান এই বাগদাদেই। বায়তুল হিকমা নামের এই বিশাল লাইব্রেরিকে কেন্দ্র করে বাগদাদে গড়ে ওঠে বিরাট গবেষণা কেন্দ্র। জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থভূমিতে পরিণত হয় বাগদাদ। খ্যাতিমান কবি ও ঐতিহাসিকরা নিয়মিত আসতেন এখানে জ্ঞানচর্চা করতে।
তৎকালীন বিশ্বে বাগদাদ ছিল জ্ঞানচর্চার এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রাণকেন্দ্র। পাবলিক লাইব্রেরিও এই বাগদাদে। দার্শনিক ইমাম গাজ্জালি (জন্ম: ৪৫০ হিঃ, মৃত্যু: ৫০৫ হিঃ) এর সময়ে সেখানে প্রতিষ্ঠা লাভ করে নিজামিয়া মাদরাসা। বাগদাদের সুশোভিত জ্ঞান-বাগানে ভরা যৌবন নামে হারুন-উর-রশিদের আমলে। বিত্ত-বৈভব, নিরাপত্তা, লাইফস্টাইল, প্রভাব-প্রতিপত্তি, শিল্প-সাহিত্য, জ্ঞানচর্চা, স্থাপত্যকলা—এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যাতে তৎকালীন বাগদাদ পিছিয়ে ছিল। সবকিছুকে ছাপিয়ে বাগদাদ হয়ে ওঠে তদানীন্তন তাবৎ দুনিয়ার সবচেয়ে আধুনিক ও আদর্শ শহর।
মুসলিম শাসনের স্বর্ণযুগও উঁকি দিয়েছিল এই বাগদাদে। তবে আব্বাসীয়দের উদাসীনতায় সেই শৌর্যবীর্য টেকেনি বেশি দিন। ১২৫৮ সালে মোঙ্গলীয় শাসক হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ করে। শহরে ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা রচনা করে। লক্ষ লক্ষ নিরাপরাধ বনী আদমকে বধ করে। পুড়িয়ে দেয় লাইব্রেরি ও গবেষণা কেন্দ্রগুলো। বইয়ের পাতা উন্মুক্ত প্রান্তরে এনে জালিয়ে ভস্ম করে দেয়। মসজিদ ও দৃষ্টিনন্দন সকল ভবন গুঁড়িয়ে দেয়। গোটা বাগদাদে বিনাশ ও ধ্বংসের কুরুক্ষেত্র রচনা করে। বিস্তৃতির অতল গহ্বরে এখনকার বাগদাদ হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন সেখানে কেবল অতীতের স্মৃতিরাই ঘুরে বেড়ায়।
মাত্র ১৩ দিনে বাগদাদ ধ্বংসস্তূপের নগরীতে পরিণত:
ইসলামী খেলাফতগুলোর মধ্যে আব্বাসীয়রা ছিল তৃতীয়। এর প্রশাসনিক সদর দপ্তর ও রাজধানী ছিল বাগদাদ। দোর্দণ্ড প্রতাপে আব্বাসীয়রা শাসন পরিচালনা করে। খলিফাদের হাতে ন্যস্ত ছিল গোটা খিলাফতব্যবস্থা। মুসলিম সাম্রাজ্যের বিস্তার ও অগ্রগতি ছিল ঈর্ষণীয় এবং দেখার মত। কিন্তু তারপরেই বিধিবাম! ভাগ্যের নির্মমতায় আব্বাসীয়রা পরাজিত হয় মোঙ্গলীয়দের হাতে। নির্মম ও বর্বর চেঙ্গিস খানের নাতি হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ করে এবং গোটা শহর ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। ইতিহাসের নির্মম, বর্বর ও ঘৃণ্য সেই আক্রমণ মানবজাতির জন্য আজও এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে আছে।
১২৫৭ সালের শেষ সময়। হালাকু খান বাগদাদের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। তখনকার বাগদাদের খলিফা আল-মুস্তাসিম বিল্লাহ। হালাকু খান বাগদাদের উপকণ্ঠে পৌঁছে তার বাহিনীকে বিভক্ত করে। একদল দজলা নদীর পূর্বে এবং অন্যদলকে পশ্চিম তীরে অবস্থান নিতে বলে। হালাকু খান খলিফা আল-মুস্তাসিমকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। খলীফা তা প্রত্যাখ্যান করেন। হালাকু খান বেজায় চটে যায়। তবে হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের প্রেক্ষাপট ও কারণ ছিল একটু ভিন্ন।
আরেকটু বিশদে বলা যায়, একবার মোঙ্গল শাসক হালাকু খান ইরানের গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়ের ক্ষমতা বিলোপ করার জন্য বাগদাদের সাহায্য চায়। কিন্তু বাগদাদের খলিফা তাকে সাহায্য করা থেকে বিরত থাকেন। মুসলিম সাম্রাজ্য মোঙ্গলীয়দের রক্তিম চক্ষুশূলে পরিণত হয়। আগ্রাসন ত্বরান্বিত হয়। হালাকু খান গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়কে দমন করে। এরপর আব্বাসীয়দের ধ্বংসের মহাপরিকল্পনা সাজায়। হালাকু খান সদলবলে সরাসরি বাগদাদে পৌঁছে যায়। দজলা নদীতে তার বাহিনীকে পাহারায় রেখে হালাকু খান খলীফাকে বাগদাদের সুরক্ষা প্রাচীর ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। খলিফা তাতে রাজি হননি। ফলে হালাকু খানের বাহিনী বাগদাদ অবরোধ করে। তারা বাগদাদের চারপাশে পরিখা খনন করে।
বাগদাদের একদল গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আসন্ন যুদ্ধ এড়াতে হালাকু খানের সঙ্গে আলোচনা করতে আসে। হালাকু খান তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং সেইসাথে তাদের হত্যা করে। তখন বাগদাদের খলিফা আল-মুস্তাসিমের সামনে দুটি পথ খোলা- আত্মসমর্পণ কিংবা বিশাল মোঙ্গল বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ। মোঙ্গল সেনারা দ্রুত পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে বাগদাদ আক্রমণ শুরু করে। খলিফার সেনাবাহিনীতে তখন মাত্র ৫০ হাজার সৈন্য। অন্যদিকে হালাকু খানের বিশাল বাহিনীতে ছিল ১ লাখ ৫০ হাজার যোদ্ধা।
১২৫৮ সালের ২৯ জানুয়ারি বাগদাদ অবরুদ্ধ হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি বাগদাদ আত্মসমর্পণ করে। তবুও হালাকু খানের রোষানল থেকে রক্ষা পায়নি নগর ও তার বাসিন্দারা । ১৩ ফেব্রুয়ারি বাগদাদে প্রবেশ করে মোঙ্গল সেনা। শিশু ও নারীসহ নগরের সবার উপর তারা পৈশাচিক, র্ববরোচিত ও নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। নির্মমভাবে সকলকে হত্যা করে। সকল লাইব্রেরি ও গবেষণাগার জালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্ম করে দেয়। গুঁড়িয়ে দেয় ঐতিহাসিক সব স্থাপনা। বাগদাদের বাইতুল হিকমাহর যবনিকাপাত টানা হয়। চিকিৎসাসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা বিষয়ের ওপর রচিত অমূল্য সব বই, প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, থিসিস, ডকুমেন্টরী ও মূল্যবান সব গবেষণাপত্র চিরকালের মত হারিয়ে যায়। ইবনে কাসীর (মৃত্যু: ৭৭৪ হিঃ) বলেন, বই নদীতে ফেলে দেওয়ার কারণে দজলা নদীর পানি কালিতে পরিণত হয়েছিল। মানুষের রক্ত নদীর ন্যায় স্রোতধারায় বইছিল বাগদাদের আশপাশে। ঐতিহাসিকদের ধারণা, প্রায় ১৬ লাখ মানুষকে হত্যা করে মোঙ্গলীয় বর্বর সেনারা। ১৩ দিনে মোঙ্গলরা ধুলোয় মিশিয়ে দেয় বাগদাদ। এক মুসলিম স্বর্ণযুগের অবসান ঘটে। রচিত হয় এক কালো অধ্যায়।
[আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাছীর, খন্ড:১৩, পৃ:২০২-৩]
[আলকামিল ফিত-তারীখ, ইবনুল আছীর, খন্ড:১২, পৃ:১৪৭-১৪৮]
মার্কিন আগ্রাসন:
২০০৩ সালে নব্য হালাকু খাঁর বিমূর্ত প্রতিচ্ছবি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কালো থাবার শিকার হয় আধুনিক বাগদাদ। ইরাকি প্রেসিডেন্ট গণবিধ্বংসী অস্ত্র বানাচ্ছেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদাকে সহযোগিতা করছেন—এই ঠুনকো অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করে।
অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, পোল্যান্ড ও বেশ কয়েকটি দেশের কোয়ালিশন সেনাবাহিনী মিলে ইরাক আক্রমণ করে। টুইন টাওয়ারে হামলার অজুহাতে ইরাক যুদ্ধে নেমে যুক্তরাষ্ট্র সাদ্দাম হোসেনের পতন ঘটায়। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ইরাকের রাজধানী বাগদাদ নতুনরূপে আবার ধ্বংসের ইতিহাসে নিজের নাম লেখায়।
সাদ্দাম হোসেনের পতন এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই আগ্রাসী মনোভাবের ফলে ইরাক, সিরিয়া ও তুরষ্ক অঞ্চলে জন্ম নেয় বহুমাত্রিক জটিলতা। ক্রমান্বয়ে যুদ্ধ ও যুদ্ধকেন্দ্রিক জটিলতায় জড়িয়ে যায় গোটা মধ্যপ্রাচ্য। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও অস্থিরতার বীজ বপন হয়।
বাগদাদ আজ কেমন আছে?
ইতিহাস-ঐতিহ্যের সব ছাপ মুছে আজ বাগদাদ যেন এক অজানা-অচেনা নগরী। ইরাকের রাজধানীজুড়ে আজ চোখে পড়বে নানাবিধ ধ্বংসস্তুপ। সেই নান্দনিকতা ও ঐতিহ্য আজ কেবলই ধূসর স্মৃতি। এখানকার গোটা জীবনব্যবস্থাই এখন ফিকে। মাথা তুলে দাঁড়াবার অবস্থা নেই শহরটির। বোমা বিস্ফোরণ, গাড়ি বিস্ফোরণ ও রকেট হামলা বাগদাদবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। সাদ্দাম হোসেনের হাতে বাগদাদ আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে সাজলেও ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কোয়ালিশন জোটের সেনা হামলার পর তা ধ্বংস হয়ে যায়।
সাদ্দামের পতনের সঙ্গে সঙ্গে জেগে ওঠে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো। প্রতিনিয়ত ইরাকের নানা প্রান্তে সন্ত্রাসী হামলা, বোমা হামলায় মারা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র ইরাক থেকে তাদের সেনা সরিয়ে নেওয়ার নানা প্রক্রিয়ার কথা বললেও আদতে শান্তি আসেনি ইরাকে। মার্কিন অভিযানের পর থেকে ইরাকে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চললেও যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটির জন্য তা বড়ই চ্যালেঞ্জিং ও সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষজন কাজে ফিরেছে। শহরে হাঁটছে। শত কর্মব্যস্ততার পরও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর রোষানল থেকে মুক্ত নয় বাগদাদ।
সেনা প্রহরা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা মানুষের মনে আস্থা তৈরি করতে পারেনি। যে বাগদাদ শত শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যের নানা নিদর্শন নিয়ে গর্ব করত তার বেশির ভাগই কালের পরিক্রমায় ভাগ্যের নির্মম উপহাসে যুদ্ধ ও হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। মূল্যবান ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও নিদর্শনগুলো হারিয়ে বাগদাদ আজ হাহাকার ও ধ্বংসস্তুপের নগরী। ইরাকের রাজধানী আধুনিক শহরের আয়োজনে নিজেকে সাজিয়ে নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সঙ্কট বাগদাদকে কবে সেই শৌর্যবীর্য ও ঐশ্বর্যময় শহরের হারানো তকমা ফিরিয়ে দেবে তা কেউ জানে না।
আরো যেসব ইসলামী ইতিহাস ও ঐতিহ্যময় স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে:
১. মোসেলের মসজিদে কুবা আল-হুসাইনিয়া।
২. তালআফারের সাদ ইবনে আকীল মসজিদ।
৩. ইবনুল আছীর আল-জাযরীর সমাধি (২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর)।
৪. তিকরিতের আল-আরবাঈনিয়্যাহ জামে মসজিদ যেখানে ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. যুগের ৪০ জন সাহাবিদের কবর ছিল।
এরকম অসংখ্য স্থাপনা বাগদাদ ও ইরাকে এখন কেবলই ধূসর স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে।
ছবি ও সূত্র:
আল-আরব ডট কম
আল-আলাম টিভি ডট নেট
মাসরাভি ডটকম
এবিএনএ টুয়েন্টিফোর ডটকম