চন্দ্রকাহন
ওগো তেপান্তরের মেয়ে
সজল চোখে চন্দ্র দেখো;
রাত ফুরাবার আঁধার আঁকো!
সোনা বাঁধানো কূলের ছবি
ভাসে কী তোমার দুই নয়নে?
তবু কী কাঁদো তুমি;
আর ভাসো ওই আঁখির জলে!
ওগো গ্রহণ চাঁদের মেয়ে!
সন্ধ্যা ছুঁয়ে নীল পরশে
যখন মেঘ নামে, মন গহীনে ;
হংস মিথুন হয়ে কিগো
পদ্ম বিলে তুমি ভাসো!
সেথায় কী রাতের স্মৃতি
দিনের আলোয় তোমায় কাঁদায়!
তুমি কী দূরের কোন
পাখি হয়ে আকাশ কাঁপাও!
আর মৃদুস্বরে, মন গহীনে
নিজের গৃহ খুঁজে ফেরো!
ওগো দূর নীলিমার মেয়ে
তুমি কি আকাশ কাঁদাও?
নাকি বর্ষা রাতের প্রথম কদম
তোমার চরণ ছুঁয়ে ঝরে পড়ে!
আর তারার হাসি-তোমার কন্ঠে
মুক্ত হয়ে হেসে ওঠে!
জানো; তবু আমি আঁতকে উঠি
তোমার হাসির শান্ত স্বরে
আর রোজ জীবনের গল্প গুলো
নকশিকাঁথায় বুনে চলি।
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো
কাঁথার ভাঁজে লুকিয়ে রাখি।
তাই হয়তো
নিজকে বড়ো ক্ষুদ্র লাগে
ঠিক তেমনিভাবে চাঁদের হাঁটে
নিজকে বড্ড একলা লাগে!
আঁজলা পেতে বসে থাকি
আঙ্গুল গলে তবু যেন জোছনা ঝরে!
আর একটু করে চুঁইয়ে পড়ে;
যেন মেঘের সাথে লুকোচুরির বাহানা করে।
চন্দ্র মেয়ে,
আমি এখনো তোমার স্বপ্নে
বিভোর হয়ে আকাশ দেখি।
ভাঙা চালের ফুটো গলে
জোছনা হয়ে আসবে তুমি আমার গৃহে
আর তারার মেলায় আমার এ ঘর
আলো হয়ে জ্বলবে সেদিন।
সেই অপেক্ষায় এখনো বিভোর হয়ে স্বপ্ন বুনি
একলা একা এই চন্দ্রকাহন।
জীবন গদ্য
জীবন যেথায় যেমন করে বাঁক নিয়েছে
তেমনিভাবে গুল্ম থেকে তরুবর সেজেছি।
কাব্যবিথী আমায় ছেড়ে যায়নি তবু।
সমুদ্র তার সফেন ঢেউয়ে স্রোতের বেগে পাল্টে গিয়ে কেবল বাঁক নিয়েছে।
আমিও যে তারই সাথে একটু করে বেঁচে থাকার নিয়মগুলো আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে
জীবন গদ্য নতুন করে পড়তে লিখতে শিখেই গেছি।
কেউ চায় না শিখতে কিছু, শেখাটা ভাই বড় কষ্টের।
কিন্তু কষ্ট করে শিখে গেলে সবকিছুই সহজ লাগে।
জীবন গদ্য পদ্য হয়ে ধরা দেয় নিজ থেকেই।
মনের গহীন ছন্দ ধারায়
আত্মকথা লিখবো বলে হাতটি বাড়াই।
ঠিক তখনই হো হো শব্দে আকাশ কাঁপে
বিদ্রূপের চটুল আঘাত মন গহীনে
স্মৃতি হয়ে আঁটকে থাকে।
আর ঠিক তখনই কাব্যপ্রেমী
অবাক হয়ে বারেবারেই আকাশ দেখে।
আর স্মৃতির চোখে চোখটি রেখে
বাঁকা চোখের হাসি হাসে।
আর জীবন গদ্য পদ্য হয়ে ধরা দেয়
নিজ থেকেই বারেবারে।
নিশিকাব্য
জানিস প্রিয়
সন্ধ্যা রাতের নিশিকাব্য
জাঁকজমকের রাত জাগা ভোর
কতটা নীরব!
কষ্টরা সব ছন্দ হয়ে বন্য তালে
ঘুরে বেড়ায়,
আর হাতের রেখায় হাতটি রেখে
চুড়ির শব্দে ভূবন ভুলায়।
শোনরে প্রিয়
মেলার ভীড়ে বাবুই ঘরে
নতুনভাবে বাঁচার তরে
তোর আকাশে মরীচিকা ওড়ে
কালো মেঘের স্বপ্ন ভীরে
তুই কি জানিস!
তুই কতটা ভীষণ একা!
তাই তো প্রিয়
তোর কবিতা ভীষণ পড়ি
তোর আকাশে ঘুড়ি ওড়াই
হয়তো তোকেই ভীষণ ভালোবাসি
মুখ ফুটে হয়নি বলা!
জানিস কি তুই!
কলিং বেলের শব্দে
এখনও আঁতকে উঠি
এই ভেবে…
তুই এলি বলে!
যেখানে শব্দরা সব হারিয়ে গিয়ে
নিঝুম রাতে বৃষ্টি ঝরায়!
জানিস প্রিয়
সন্ধ্যা তারা
এখনো না মিটিমিটি আলোয় জ্বলে
আর তোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে
গোধুলী আলোয় নিহারীকা খোঁজে
হয়তো এখনো তোরই অপেক্ষায়!
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে
ভুল কথাতে মনের মাঝে
এমন করে আঁচড় কাটে
চোখের জলও অশ্রু হয়ে আর ঝড়ে না।
খুব করে ইচ্ছে জাগে বদলে যেতে
বাস্তবতার এই জীবনে
একটু করে স্বার্থপর
হওয়াই হয়তো ভালো!
মানুষগুলো কাফের হয়ে
ঘুরে বেড়ায় মুখোশ পরে
আর সব ভুলে যায়!
নিজের কাছেই নিজকে বড় হীন লাগে
এসব ভীড়ে বেড়ে ওঠা
নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে বেঁচে থাকা।
তাই মাঝে মাঝেই ফুল হয়ে যাই
বন্য হয়ে সব ভুলে যাই
তবু যেন কথা গুলোই
কানের মাঝে বাজতে থাকে
নিরব দহন হয়তো হবে!
জোড়া তালির এই জীবনে
কত কিছুই দেখতে হয় যে
না চাইলেও!
মানুষগুলো পাল্টে যায় নির্বিঘ্নে
খুব ধীরে।
তাই হঠাৎ করেই ঠোঁটের কোণে
বাঁকা হাসির রেখা জাগে
এও জীবন!
আবর্তনের ধারা
প্রানেরো ব্যথা হরি নিশীথ ও শর্বরী
জাগরণে বিভাবরী সজ্জিত কাননে
মুখরিত কলতানে কেকা ঐ বাদাবনে
লহরীর তালে তালে বাজে সুর আনমনে
আঁখি নির ঝরে ঐ মনের মাধুরী নিয়ে।
অজ্ঞাত কুশীলবে কত শত স্মৃতি ভাসে
কত মুখ মুখোশের অগণিত আনাগোনা
সুখপ্রানো ধারা বেয়ে যবে পাখি ঘরে ফিরে
প্রানেরো স্পন্দন পাই যেনো ফিরে ফিরে
নীলিমার বিশালতা আকাশের বানীতে
দিয়ে যায় শুভ্রতা মেঘেদের ছোঁয়াতে
প্রানেরো ঐশ্বর্য থাকে এক গহ্বরে
যে পারে খুলিতে তারে নিজেরে দেখিতে পায়
আলোরই জোয়ারে।
সন্ধ্যার প্রদীপে ঢিমে তালে জ্বলে সে
কাঁচের এক আঁধারে থাকে সে নীরবে
রসদ দিলে যে পরে জ্বলে সে কিঞ্চিৎ
কখনও হটাৎ জ্বলে চারিদিক আলো করে
সে আলোর বিচ্ছুরণ দেখে হই মোহিত
দ্বার খুলিতে মন হয় না আর উদ্যত
হিরের দেখা যেনো মেলে না আর সহসাতো।
অস্তিত্তের আঁধারে থাকি একা নীরবে
জেগে থাকি,জেগে আছি
আবর্তনের এই ধারাতে।
ভালো থাকার মূলমন্ত্র
মানুষ নামের প্রাণীর মাঝে মুখোশ খুবই জরুরি।
পোশাকবিহীন মানুষগুলো
একেবারেই বিসদৃশ।
প্রাণীর দেখো!
জামা জুতোর নেই প্রয়োজন।
মানুষ নামের প্রাণীগুলোর
কিন্তু তা খুব প্রয়োজন।
কারন তারা ভাবতে জানে,
কটু কথা বলতে জানে,
আবার কথা নামের বিষের পেয়ালা
হাতে ধরে হাসতে জানে,
মাঝেমধ্যে চেখেও আবার দেখতে জানে।
তাই তাদের পোশাক পরা খুব জরুরি।
তা না হলে ভেতর থেকে কখন কোন প্রাণী এসে
দরজা খুলে হেসে দাড়ায়!
আর অপ্রস্তুত হয়ে তুমি বিব্রত হও!
কেই বা জানে?
তাই সেজেগুজে পরিপাটি থাকতে শেখো।
আমার মতো মূর্খ যারা
তারা আগে পোশাক নামক বস্তু গুলোর কদর করতে জানতো না!
একই সাথে পোশাকী
এ মানুষ ভেবে ভীষণরকম হেয় মনে এড়িয়ে যেতো।
ভাবতো ওগুলো লোকদেখানো,
অবান্তর আর দুমুখো সাপ।
কিন্তু এখন জানে এবং মেনেও চলে…
দুমুখো সাপ নাইবা হলে
তবু পোশাক পড়া ভীষণ ভালো যা বেঁচে থাকায় খুব জরুরি।
জীবন থেকে ঠেকে শেখা।
এই জীবনে অনেককিছুই ঠেকে এবং ঠকে শেখা।
তাই শিক্ষাগুলো খুব প্রাঞ্জল।
আভিধানিক নয় একেবারেই।
পোশাক ছাড়া যেমন তুমি চলতে পাড়ো না ভীড়ের মাঝে
এমনকি ভীড় ছাড়াও।
তেমনিভাবে এই সমাজে সুস্থ হয়ে চলতে গেলে
মুখোশ তুমি পড়তে শেখো।
যা খুব জরুরি।
তানা হলে মনের মাঝের পশুর ছবি বেরিয়ে আসবে যখন তখন
আর কামড়ে দেবে এই তোমাকেই।
দৃশ্য কিংবা অদৃশ্য ছবি আসে মনের মাঝে স্বপ্নাকারে
আর সকল দৃশ্য দেখিয়ে যায় ক্ষণিকেই।
তাই ভেবে ভেবে অবাক হই কতটা ভুল ছিলেম আমি। পোশাক পড়া লোকগুলোকে ভীষণ নীচু মনে হতো।
মনে হতো সাহস নেই সত্যি বলার।
মনে হতো কাফের তারা
মুখের এবং কাজের সাথে মিল নেই তো।
এখন বুঝি এই সমাজে কাফেরেরও খুব প্রয়োজন। নতুবা সমাজ টিকবে কেন?
পোশাক বিহীন ঘুরে বেড়ালে
লোকে তোমায় পাগল ভেবে ইট ছুড়বে।
এই সমাজের অযোগ্য তুমি পথে পথে ঘুরে বেড়াবে।
কাফের হও হতে শেখো।
সকল শিক্ষাই শিক্ষনীয়।
সকল রিপুই প্রয়োজন।
সৃষ্টিকর্তা বিনা কাজে দেয়নি কিছু!
প্রয়োগ বিধি তোমার হাতে।
কিভাবে তা করবে প্রয়োগ সে শিক্ষা তোমার কাছে।
তবে পোশাক ছাড়া ঘুরো না।
মানুষ নামের প্রাণীগুলোর পোশাক লাগে।
তারা পোশাকবিহীন কদর্য।
তাই পোশাক পড়ে সেজেগুজে ঘুরে বেড়াও।
ভালো বাসা এবং ভালোবাসা দুটোই তোমায় খুঁজে নেবে।
ভালো থাকবে।
জেনে নিও।