বর্ষা মৌসুম পুরোপুরি শুরু হলে রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ানক রূপ নিতে পারে। এই সংকট মোকাবিলায় এখন থেকেই এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের জোরালো প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এছাড়া বাসা বাড়ি নিয়মিত পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে নগরবাসীকে খুব সচেতন হতে হবে বলে তাগিদ দিচ্ছেন কীটতত্ত্ববিদরা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গড়ে একশোটি পাত্রের মধ্যে ১০টিতেই পাওয়া যাচ্ছে এডিসের লার্ভা। বেশ কয়েকটি এলাকার বাসাবাড়িতে উত্তর সিটি করপোরেশনের অভিযানে এ চিত্র বেরিয়ে এসেছে।
রাজধানীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রজননস্থলের পরিমাণ বেড়েছে। রাজধানীর ২৩টি ওয়ার্ডেমশার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ১০ এর বেশি পাওয়া গেছে।
এসব এলাকার বিভিন্ন বাসা বাড়ি ও নির্মাণাধীন বিভিন্ন ভবনের ১০০টি মধ্যে ১০টি পাত্রে মিলেছে এডিসের লার্ভা। রাজধানীর দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডের ৩ হাজার ১৫০টি বাড়িতে পরিচালিত হয় এই জরিপ কার্যক্রম।
ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. একরামুল হক বলেন, ‘দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাত্র ৩টি সাইটে আমরা ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি পেয়েছি। হাউজ ইনডেক্স হিসাব করে দেখা গেছে, এটি চার দশমিক ৭৫ অর্থাৎ ৫ এর কাছাকাছি। আমাদের ধারনা এবার বর্ষা মৌসুম নগরবাসীর জন্য ডেঙ্গু রোগ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই জরিপের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনকে যত দ্রুত সম্ভব মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদরা।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, সম্ভাব্য যে সকল পাত্রে এডিস মশা জন্মায় বা জন্মানোর সম্ভাবনা রয়েছে; সেই সব পাত্র অপসারণ করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। বর্ষা শুরুর আগেই সিটি মেয়রদের উচিত কাউন্সিলরদের নিয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে, পাড়া মহল্লায় ভাগ করে স্থানীয় সমাজকর্মী এবং যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করা।
এবছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হতে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যেটা তথ্য পেয়েছি গত বছরের চেয়ে এবার ডেঙ্গু আরও বেশি ভয়ঙ্কর হতে পারে। আমার কথা হলো, আমরা সাধ্য মতো চেষ্টা করবো। যা যা করা দরকার আমার কাউন্সিলদের নিয়ে, সিটি করপোরেশনের সবাইকে নিয়ে তা করবো। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে ক্যাম্পেইন করা হবে। কোথাও এডিসের লার্ভা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আইন অনুযায়ী নিয়মিত মামলা হবে। কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনীয় লোকবল ও কীটনাশক নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রস্তুত আছে বলেও জানান মেয়র আতিকুল। ডেঙ্গু মোকাবিলায় উত্তর সিটি করপোরেশন কঠোর হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে মেয়র আতিক বলেন, ‘এডিসের লার্ভা পাওয়া গেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আইন অনুযায়ী নিয়মিত মামলা হবে। গতবার ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করেছি। এবার শুধু জরিমানা নয়, প্রয়োজনে জেলও হবে।’
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘লোকবল, যন্ত্রপাতি এবং ওষুধ কী পরিমাণ মজুত আছে সেগুলো নিয়ে দুই সিটির মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অবস্থাটা পর্যালোচনা করেছি। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দুই সিটি করপোরেশেনই ডেঙ্গু মোকাবিলায় পুরোপুরি প্রস্তুত আছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে; গত ২০২১ সালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। আর প্রাণ হারিয়েছেন ১০৫ হন। যাদের অধিকাংশই ছিলেন, রাজধানীর বাসিন্দা।