মুঘল স্থাপত্যশৈলী নাটোরের গায়েবি মসজিদ বা শাহী মসজিদ। নাটোর শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গুরুদাসপুর উপজেলার ৬ নং চাপিলা ইউনিয়নের বৃ-চাপিলা গ্রামে অবস্থিত। ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য মতে এই ইউনিয়নে রয়েছে মোট ৮৪ টি মসজিদ। তার মধ্যে শাহী মসজিদ অন্যতম।
ইতিহাস বলছে- মুঘল আমলের চাপিলাতে মুঘলদের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল। এ অঞ্চলের প্রাচীন দুর্গ বিচারালয় কাছারি অট্টালিকা জলাশয় মসজিদ এবং অনেক প্রশাসনিক বিষয়ের কার্যালয় ছিল। এছাড়া ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে ২৭ জুন তারিখের আদেশ অনুযায়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে এখানে ফৌজদারি আদালতের খবর পাওয়া যায়।
ঐতিহাসিকরা মনে করেন মুঘল আমলের কোন এক সময় এই মসজিদটি রচিত হয়েছিল। কালক্রমে চাপিলার এই নগরীটি ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। বহুদিন এঅঞ্চলটি লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। সন ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে মুর্শিদাবাদ, কোলকাতা, ঢাকা-ময়মনসিংহ এলাকা থেকে মানুষ এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করতে আসে।
মূলত তারা এই জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলে মসজিদটি আবিষ্কার করেন। কালক্রমে তারা সংস্কার করে নামাজ শুরু করেন। যেহেতু আশেপাশের অনেক ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনার নিদর্শন পাওয়া যায়। তাই কোন উর্বর মস্তিষ্ক সেই সময়ে প্রচার করে যে এটি এক রাত্রের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে।
তাই গায়েবি মসজিদ নামে চার দিকের নাম ছড়িয়ে পড়ে। তবে বহু মানুষ সেখানে মানত নিয়ে আসেন রোগবালাই বালা-মুসিবত ভালো হবার আশায়। হাঁস, মুরগি, কবুতর, ডিম থেকে শুরু করে নতুন ফসল সবই মসজিদে দেওয়া হয়। এবং প্রত্যক্ষ ডাকের মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করে দেয়া হয় মুসল্লিদের মধ্যে।
মানুষ বিশ্বাস করে মসজিদে মানত করলে সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে। এমন নিদর্শনও রয়েছে অত্র অঞ্চলে। মসজিদটি সংস্কারের সময়ের পুরাতন অনেক আদল নষ্ট হয়ে গেছে। ইট চুন-সুরকি দ্বারা নির্মিত এই মসজিদের দেওলের প্রশস্ত সাড়ে চার ফুটের মতো। এর দেওয়ালে একটা সময় সুন্দর কারুকার্য ছিল।
তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের মত এ অঞ্চলে আরো বেশকিছু মসজিদ রয়েছে। স্থানীয়রা মনে করেন রাজশাহীর ঐতিহাসিক বাঘা মসজিদের নির্মাণ সময়ের সমসাময়িক সময়ে দুই কাতারে ৪১ জন মুসল্লি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এটি নির্মিত হয়। তবে বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মূল মসজিদের পেছনে সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
যেখানে এখন প্রতিদিন শতাধিক মুসল্লী নামাজ পড়তে আসেন। পাশাপাশি জুম্মার দিনে নারীসহ হাজার মুসল্লির সমাগম ঘটে। মূল মসজিদের পাশে নারীদের নামাজের জন্য পরবর্তীতে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও মসজিদটি পরিদর্শন করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিনিয়ত নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে।
কোন রকমে টিকে থাকা নাটোরের ঐতিহাসিক প্রাচীন এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটির, অস্তিত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখতে, সরকারিভাবে সহযোগিতার দাবি জানান স্থানীয় এলাকাবাসী সহ মুসল্লীরা।