ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পূর্বের বিরোধ ও স্কুলের নির্বাচনে পরাজয়ের জেরে দুইজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরও ১০ জন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী-বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা সার্কেল) সুমন কর।
ঈদের দিন মঙ্গলবার (৩ মে) দুপুর ২টার দিকে উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ী এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার চরদৈতরকাঠি গ্রামের হাসেম মোল্লার ছেলে আকিদুল মোল্লা (৪৬) ও একই গ্রামের মোসলেমের ছেলে খায়রুল (৪৫)।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দীর্ঘদিন ধরে ঘোষপুর ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ি এলাকায় উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা জামান সিদ্দিকি (৫৬) এবং আলফাডাঙ্গায় কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফ খালাসির (৫৫) মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল।
গত মাসে গোহাইলবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে দুই পক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ওই নির্বাচনে আরিফ গ্রুপকে পরাজিত করে মোস্তফা জামান সিদ্দিকী পুনরায় ওই স্কুল কমিটির ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন।
মোস্তফা ওই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। নিহত ও আহত সকলেই মোস্তফা জামান সিদ্দিকী পক্ষের বলে নিশ্চিত করেছেন পুলিশ ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার ঈদের নামাজের পর বাড়ির পাশে গোহাইলবাড়ি বাজারে গোলাম মোস্তফা সিদ্দিকি কর্মীদের নিয়ে বসে ছিলেন। এ সময় বজলু খালাসী গ্রুপের সমর্থকদের ১০-১৫ জনের একটি দল দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওই দোকানে অবস্থানকারীদের উপর হামলা করে এলোপাথারিভাবে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়।
এ সময় তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসলে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মোস্তফা জামান সিদ্দিকির চাচাতো ভাই আকিদুল শেখ ও খায়রুল শেখ গুরুতর আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়।
এ সময় মোট সাতজন গুরুতর আহত হন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন শেখের দুই ছেলে মাছুদ আহমেদ (৪০) ও আলমগীর আহমেদ (৫০)। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া আরও আহত হয়েছে- ভাড়ালিয়ার চর এলাকার মো. রাজিবুল ইসলাম (৩০), কাদের মোল্লা (৪০) ও সোহেল মোল্লা (২০)। তাদেরকে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মোস্তফা জামান সিদ্দিকী বলেন, “ঈদের নামাজের পর দুপুরের দিকে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসে ছিলাম। এ সময় বজলু খালাসির ছেলে শরীফ খালাসি, তার ভাই আরিফ খালাসি ও দেলোয়ার মেম্বারের নেতৃত্বে প্রায় ১০-১৫ জনের একটি দল আমার ও আমার লোকজনের উপর হামলা চালায়। এতে দুজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন।”
এ বিষয়ে কথা বলতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফ খালাসির মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তার নাম্বার বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে ঘোষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন নবাব মিয়া বলেন, “গত ১০ বছর ধরে মোস্তফার পরিবারের সঙ্গে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আরিফ খালাসির পরিবারের বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি স্কুল কমিটির নির্বাচনে মোস্তাফা জিতে যাওয়ায় এ বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। এরই জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে।”
তিনি আরও বলেন, “মঙ্গলবার দুপুরে গোহাইলবাড়ী বাজারের মোস্তফার দোকানে এসে আরিফ খালাসির সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দোকান ও দোকানের আশেপাশের লোকদের কুপিয়ে জখম করে। ফলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।”
ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী-বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা সার্কেল) সুমন কর বলেন, “যারা আহত বা নিহত হয়েছেন তারা একই দলভুক্ত। তারা একটি দোকানে বসে ছিলেন। ওই সময় প্রতিপক্ষের ১০-১২ জন ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর হামলা চালিয়ে কুপিয়ে জখম করে।”