রাজধানী ঢাকায় দুঃসহ যানজট নিত্যদিনের চিত্র। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ নগর সদা জাগ্রত ও কোলাহলপূর্ণ থাকে। কিন্তু চিরচেনা সেই ঢাকা এখন ফাঁকা। নেই কোলাহল, নেই যানজট। ১-২ ঘণ্টার পথ এখন মাত্র ১০-১৫ মিনিটেই যাওয়া যাচ্ছে।
ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে রাজধানী ছেড়ে গেছে অর্ধেকের বেশি মানুষ। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে গত বুধবার থেকেই মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। রোববার এসে রাজধানী অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। গেল চার দিনে ৭০ লাখের বেশি মানুষ রাজধানী ছেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে এখন আর ব্যস্ততা নেই। শাহবাগ, পল্টন, সচিবালয়, কাকরাইল, মৎস্যভবন ও হাইকোর্ট এলাকার রাস্তাগুলো এখন ফাঁকা। মাঝে মধ্যে কয়েকটি ব্যক্তিগত ও গণপরিবহন দেখা গেলেও যানজটের কোনো চিহ্ন নেই।
এদিকে, গণ-পরিবহনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রাস্তায় এখন সিএনজি ও রিকশার রাজত্ব। শেষ মুহূর্তে এসে যারা বাড়ি যাচ্ছেন, তারা এসব যানবাহনে করে লঞ্চ ও বাস টার্মিনালে এবং রেলওয়ে স্টেশনে যাচ্ছেন।
বিকেল ৩টার দিকে শাহবাগ মোড়ে কথা হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহনের একটি বাসের হেলপার মো. আশরাফুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, যাত্রী নেই, রাস্তা-ঘাট সব ফাঁকা। এখন আবার আব্দুল্লাহপুর যাচ্ছি। মাত্র ৩০ মিনিটে গুলিস্তান থেকে যাওয়া যাচ্ছে। আগে যেতে সময় লাগত ২-৩ ঘণ্টা।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় কথা হয় মতিঝিল-মিরপুর ১২ রুটে চলাচলকারী বিকল্প অটো সার্ভিস পরিবহনের একটি বাসের যাত্রী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গতকাল ছুটি পেয়েছি, আজ বাড়ি যাচ্ছি। কমলাপুর থেকে বাসে উঠব। মাত্র ২৫ মিনিটে বাস ফার্মগেট এসেছে। রাস্তায় কোনো যানজট নেই।
রাস্তা ফাঁকা ও গণপরিবহন কম থাকার পাশাপাশি যানজট না থাকায় রিকশা ও সিএনজিচালকদের আয় ভালো হচ্ছে।
বাংলামোটরে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ সিএনজিচালক সিদ্দিক মিয়া বলেন, সকাল থেকে তিনটি বড় ট্রিপ পেয়েছি। গাবতলী, মহাখালী ও সদরঘাট। ঈদের পরের দিন বাড়ি যাব। রাস্তাঘাটে গণপরিবহন কম থাকে। যারা শেষ সময়ে বাড়ি যান, তারা গাড়ি পান না। তাই এ সময়ে থাকি কিছু বাড়তি টাকা আয়ের জন্য। রাস্তা ফাঁকা থাকায় খুব সহজেই যাত্রী নিয়ে চলাচল করা যায়।
মিরপুর-১০ নম্বর থেকে যাত্রী নিয়ে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে এসেছেন রিকশাচালক মো. সাইদুর। তিনি বলেন, এ সময়ে আমরাই একমাত্র ভরসা। রাস্তাঘাটে বাস নেই বললেই চলে। তাই এখন মানুষজন যাতায়াত করে রিকশা ও সিএনজিতে। আমরা বাড়তি কিছু টাকা আয় করার আশায় রয়ে গেছি।
অবশ্য রিকশা ও সিএনজিচালকরা বাড়তি ভাড়া দাবি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন কিছু যাত্রী। রাজধানীর শুক্রাবাদ এলাকায় আজিমপুর থেকে সিএনজি করে এসেছেন যাত্রী খায়রুল মিয়া। তিনি বলেন, স্বাভাবিক ভাড়া থেকে সিএনজি চালকরা ঈদ বোনাসের নামে একশ থেকে দেড়শ টাকা বেশি চাচ্ছেন। এখন রাস্তায় যেহেতু গণপরিবহন নেই, বাধ্য হয়ে তাদের এ টাকা দিতে হচ্ছে।