বাউল
একলা বেশ তো আছি,একলা থাকাই ভালো
দুপুরে ডিস্কো নাচি, রাতে পাই চাঁদের আলো।
কোনো এক নিঝুম দুপুর, কিংবা গভীর রাতে
মনে আর পড়েই না তো,টান দিই গঞ্জিকাতে।
পরোয়া করব কেন? সমাজটা দিচ্ছে বা কী?
ছোট্ট জীবন আমার, তাইতো নাচতে থাকি।
পলকা এই জীবনে, কী হবে দুঃখ এনে?
চল্ না উড়াই ঘুড়ি, সুতোতে মাঞ্জা টেনে।
লাফিয়ে পাহাড় চড়ে, সাঁতরে নদীর বুকে
কবিতা দু’এক কলি আসলে রাখছি টুকে।
এভাবে কাটছে তো দিন,তোমাকে আর কী খুঁজি?
জানিনা কোথায় তুমি, আমাকে ভাবছো বুঝি?
ভাবলে কী হবে আর, নদীতে জল গড়ালে
চাঁদটা বন্ধু আমার, গভীর এই রাত্রিকালে
গাছেরা আগলে রাখে, পাখিরা গাইতে থাকে
ঘরে আর যায় কী ফেরা? ওই যে বাউল ডাকে !
রাত
জেগে বসে আছি রাতের গভীরে একা।গোটা পৃথিবীটা ঘুমে
আকাশের বুকে অনেক তারার মেলা,কিছু লোক চ্যাটরুমে
সম্পর্ক তৈরিতে এখনও ভীষণ ব্যস্ত।ওড়ে রাতচরা পাখি
শাল-পিয়ালের আধো ঘুমে ভেজা ডালে।কবিতায় লিখে রাখি
ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে নদীটা এগোয়, সাগরের অভিসারে
পাহাড় চূড়াটা একাএকা জেগে থাকে এ রাতের অন্ধকারে
লাজুক চাঁদটা গাঁয়ের বধূর মতো ঘোমটায় মুখ ঢাকে
দু’একটা পাতা খসে যায় চুপিসারে, কেই বা হিসেব রাখে?
বনের গভীরে নিশাচর ছুটে যায়, রাতের শিশির ঝরে
খুব মমতায় পৃথিবীর সারা গায়ে। মনে পড়ে মনে পড়ে
হারানো সেসব বাঁধাবাঁধি করে বাঁচা, সুরেসুরে বাঁধা তার
গভীর গভীর অজানা অলীক দেশে প্রেম ভরা অভিসার…
কাঁটাতার
আমরা পাখিরা উড়ে যাই কতদূরে
কত দেশ-গ্রাম ইয়ত্তা নেই তার
মানুষেরা শুধু ঝগড়া-বিবাদ করে
মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।
আমরা নদীরা বয়ে যাই কত দূরে
পাহাড়ের থেকে দূর সাগরের পার
মানুষেরা শুধু দ্বন্দ্ব-বিবাদ করে
মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।
আমরা আলোরা সূর্যের থেকে এসে
ভেদাভেদ ভুলে ঘোচাই অন্ধকার
মানুষেরা শুধু দ্বন্দ্ব-বিবাদ করে
মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।
আমরা মেঘেরা হাওয়ার ডানায় ভেসে
কত পথ চলি হিসেব থাকে না তার
মানুষেরা শুধু দ্বন্দ্ব-বিবাদ করে
মানুষের শুধু দেশভাগ কাঁটাতার।
মানুষেরা কেন কাঁটাতার ভালোবাসে?
হিংসা বা দ্বেষে কেন যে বিবাদমান!
কেন যে শেখেনি ভালোবেসে বেঁচে থাকা,
নদী বা বাতাস, মেঘ-পাখিদের গান।
বিপ্রলব্ধ
ত্রাহ্যস্পর্শে তিথিক্ষয়ে চাঁদের দেখা নেই
মঞ্জুষাতে লক্ষ্ণীকে নয়, চাইছি তোমাকেই।
তামরসের মতোই তুমি, মুগ্ধ হয়ে থাকি
ধৈবতহীন আরোহণে তিলক কামোদ রাখি।
অনিকেত শব্দচাষী বন-পাহাড়ে ঘুরি
স্মিত হাসির ময়ূখছটায় মন করেছ চুরি।
ভৈরবের ওই বিরহী সুর পাখির ডাকে ঝরে
বিপ্রলব্ধ, বিহানবেলায় বড্ড মনে পড়ে।
শব্দার্থঃ-
তিথিক্ষয় ~ একদিনে দুই তিথির ক্ষয় হয়ে তৃতীয় তিথির সংযোগ; ত্রাহ্যস্পর্শ; অমাবস্যা।
মঞ্জুষা ~ লক্ষ্ণীর ঝাঁপি।
তামরস ~ পদ্ম।
তিলক কামোদ হল একটা রাগ।এই রাগে অবরোহণে সাতটি সুর থাকলেও আরোহণে ধা বা ধৈবত সুরটি থাকে না।
অনিকেত ~ গৃহহীন পথিক।
শব্দচাষী ~ কবি।
ময়ূখ ~ রশ্মি।
ভৈরব হল প্রভাতকালীন একটা রাগ।ভোর বেলা গাওয়া হয় এই রাগ।
বিপ্রলব্ধ অর্থ বঞ্চিত বা প্রতারিত।
বিহানবেলা মানে সকালবেলা।
দহন
ধুলোর ঝড় উঠেছে মরু রাত্রিতে
চাপচাপ অন্ধকার
বিষাদ নদীর শীতল স্রোতের আবর্ত
ঘুটঘুটে মধ্যযুগীয় অন্ধকারে
পেঁচারা ওড়াউড়ি করছে
আমার দু’হাতে শুধু সূর্য পোড়া ছাই
তুমি নেই
তোমার আমার মধ্যে অনন্ত গ্যালাক্সির ব্যবধান
আরও দূরে সরে যাচ্ছি আমরা
আমার চারিদিকে দাবানল
আমার বুকের ভিতরে জ্বলন্ত ভিসুভিয়াস
আমার চারিদিকে পাথর ভাঙার শব্দ
আমার হৃদয়ের স্ফটিকটা ভেঙে
কাচের টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে মেঝের ধুলোয়
কান্নারা বোবা হয়ে গেছে, অশ্রুরা স্তম্ভিত
ভাঙা মাস্তুল হাতে নিয়ে আমি একলা দাঁড়িয়ে আছি।
ফেরা
অতি যান্ত্রিকতায় যারা ভেসে গিয়েছিল
তারা আকাশ থেকে ফিরে আসছে
তাদের প্রত্যেকের হাতেই এখন লাল গোলাপ
প্রাচীন গুহামানব এখন তাদের নায়ক
তারা ভেবেছিল আকাশ থেকে পেড়ে আনবে আলো
ভেবেছিল নক্ষত্র থেকে নিয়ে আসবে
এক সমুদ্র সুখ
ভেবেছিল পাখির চেয়েও দ্রুত উড়ে গিয়ে
জয় করবে ব্রহ্মাণ্ড
অথচ নিঃস্ব হয়ে তারা ফিরে এসেছে
প্রাচীন বাংলার লালমাটির গ্রামে
নিকানো উঠোন, ধানের গোলা,
বিদ্যুৎহীন রাতে জ্যোৎস্না মেখে
তারা উঠোনে গড়াগড়ি খায়
তাদের স্বপ্নে হামাগুড়ি দিয়ে হেঁটে বেড়ায়
গ্রামের আধান্যাংটো শিশুরা।