সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পেশাজীবীদের গায়ে হাত তুলে একাধিকবার সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ আসনের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি। এবার নিজ দলীয় নেতাদের পিটিয়ে আবারও আলোচনার আসলেন।
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) ইফতারের আগে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা হল রুমে টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা চলাকালে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় বদির নেতৃত্বে তার ভাই আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারি আব্দুস শুক্কুর, নুর মোহাম্মদ ওরফে লাস্টিপসহ বদির ক্যাডার বাহিনী সভা চলাকালে হলরুমে ঢুকে এ হামলা চালান। এতে আহত হন টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইউছুফ (মনো), পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. ইউছুফ ভুট্টো ও উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হক।
হামলার শিকার মো. ইউছুফ জানান, বর্ধিত সভা চলাকালীন সাবেক সংসদ সংসদ বদি পৌর কমিটিকে ডিঙ্গিয়ে বারবার ওয়ার্ড কমিটিকে প্রাধান্য দিয়ে কথা বলছিলেন। পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইউছুফ (মনো) তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করায় সেখানে বাগ্বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে বদি মঞ্চ থেকে নেমে হল রুমের বাইরে অপেক্ষমাণ তার ক্যাডার বাহিনীকে ডেকে এনে নিজে সরাসরি এসে মনোকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় মনোকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে যুগ্ম সম্পাদক ইউছুফ ভুট্টোকেও বেধড়ক মারপিট করেন বদি ও তার লোকেরা।
এ ঘটনার ভিডিও করতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হককেও মারধর করে মোবাইল ছিনিয়ে নেন বদির ক্যাডাররা। এছাড়া পৌর আওয়ামী লীগ নেতা জাহেদ হোসেন মুন্নাকেও হামলার চেষ্টা করা হয়। এ সময় বদি বাহিনীর হামলায় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, “কি আর বলব। আমার সামনেই তো ঘটনা ঘটেছে। তুচ্ছ ঘটনায় সাবেক এমপি বদি নিজে এসে মারধর শুরু করেন। পরে তার ভাইয়েরা এসে মারধরে অংশ নেন।”
তিনি আরও বলেন, “মারধরে টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইউছুফ (মনো), পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. ইউছুফ ভুট্টো আহত হন। এ সময় ঘটনার ছবি উঠাতে গিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদুল হককে আহত করে।”
তিনি জানান, সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি ক্ষমতায় থাকাকালেও একাধিকবার এরকম ঘটনা ঘটিয়েছেন। দলীয়ভাবে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিৎ দাশ বলেন, “টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সফল করার জন্য অন্যান্যদের মত আমিও রয়েছি। ইতোমধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিল অধিবেশন শেষ করেছে। এ কারণে ওয়ার্ডের নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে শুক্রবার টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে টেকনাফ পৌরসভা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা ছিল। সেই বর্ধিত সভায় ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্বাচিতদের কথা শোনার পর জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা বক্তব্য রাখেন। পরে ইফতারের সময় হওয়ায় আমরা অন্যত্রে চলে আছি। এরপর দলীয় নেতাকর্মীদের মারধরের বিষয়টি জানতে পারি। এ ঘটনায় স্থানীয় একটি হোটেল তাৎক্ষণিক মিটিংয়ে বসে সমাধান করি।”
মিটিংয়ে ভুক্তভোগী টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইউছুফ মনোসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন কি-না জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট রণজিৎ দাশ বলেন, “অভিযুক্তরা উপস্থিত না থাকলেও তাদের লোকজন ছিল। বৈঠকে আবদুর রহমান বদিকে পরবর্তীতে এ ধরণের ঘটনায় পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ করেনি। এরপরও যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির চারটি মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য জেলা সাংগঠনিক দলীয় নেতাদের উপস্থিতিতে পূর্ব নির্ধারিত বর্ধিত সভা হওয়ার কথা ছিল শুক্রবার। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহ আলম রাজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জিত দাশ, ইউনুস বাঙ্গালী, উপজেলা সভাপতি মাস্টার জাহেদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশরসহ জেলা ও উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।