শিশু জান্নাতুল ফেরদাউস তাসপিয়ার (৪) বাবা আবু জাহেরকে হত্যা করার জন্য ২১ হাজার টাকায় অস্ত্র ভাড়া নেন শুটার রিমন। সেই গুলিতেই বাবার কোলে থাকা তাসপিয়া মারা যায়। যার নির্দেশনা পান বাদশা ও মহিনের কাছ থেকে।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) রাতে তাসপিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার মো. রিমন (২৩) আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য দিয়েছেন।
মো. রিমন আরও বলেন, আমার কাকা বাদশার অনুরোধে কাজটি করি। কেননা কাকার সাথে মাটি কাটা নিয়ে বিরোধ ছিল। ঘটনার দিন মহিনদের বাড়ির সামনে ১০ থেকে ১২ জনে একত্র হই।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ৩ নং আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম আসামি রিমনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ডের পর রাত ৯টার আদালতের নির্দেশে আসামিকে নোয়াখালী জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তবে তাসপিয়াকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেপ্তার হলেও উদ্ধার হয়নি হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। এ ছাড়া ঘটনার আট দিনেও হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বাদশা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গত বুধবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে র্যাব-১১-এর সিপিসি-৩ নোয়াখালী ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আমরা শুটার রিমনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছি। এ সময় সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি এলজি, একটি কার্তুজ ও ১১টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, ২১ হাজার টাকা দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র কিনেছে রিমন। পুরো টাকা দিয়েছে মহিন। কার থেকে কিনেছে, আমরা এসব তথ্য পেয়েছি। হত্যায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
র্যাব-১১-এর সিপিসি-৩ নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শামীম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেছেন, পুলিশ এ মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। মূল পরিকল্পনাকারী বাদশাহসহ বাকি আসামিদের ধরতে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ এপ্রিল বিকেলে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয় বাবার কোলে থাকা শিশু জান্নাতুল ফেরদাউস তাসপিয়া। গুলিবিদ্ধ হন শিশুটির বাবা সৌদি প্রবাসী মাওলানা আবু জাহেরও। গুলিতে তার ডান চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
ঘটনার পরদিন তাসপিয়ার খালু হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে রিমন, মহিন, বাদশাসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাতে মামলার প্রধান আসামি শুটার রিমনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১। বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) শুটার রিমন ছাড়া বাকি ৪ আসামির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন নোয়াখালীর একটি আদালত।
রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন সোহেল উদ্দিন মহিন (২৪), সুজন (২৬), নাইমুল ইসলাম (২১) ও আকবর হোসেন (২৬)।
এর আগে শিশু তাসপিয়া হত্যার পরপরই পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। তারা হলেন বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ৮নং ওয়ার্ডের আবদুল মালেকের ছেলে জসিম উদ্দিন (২৬), ইমাম হোসেন ওরফে স্বপন (৩০), জসিম উদ্দিন ওরফে বাবর (২৩) ও দাউদ নবী ওরফে রবিন (১৭)। তারা সবাই কারাগারে আছেন।