উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরসংলগ্ন বর্ধিত গুরমার দুটি বাঁধ ভেঙে ৩০০ হেক্টরের ধান তলিয়ে গেছে।
এখন কৃষকদের স্বেচ্ছাশ্রমে লামাগাঁওসংলগ্ন নদীর তীরে ছায়া বাঁধ তৈরির চেষ্টা করছে প্রশাসন। এটা সফল হলে ধর্মপাশা ও তাহিরপুরের অন্তত ১২টি হাওরের ফসল বাঁচবে।
এদিকে, জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের আসামপুর এলাকায় শনিবার সন্ধ্যায় নলজুর নদীর পার উপচে স্থানীয় হালির হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করলেও পানির প্রবল চাপের কারণে ঠেকাতে পারেনি। রাতেই ফসলের ক্ষেতে পানি ঢুকতে শুরু করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার জানান, হালির হাওরে ৩৭০ একর জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। এখনো পুরো হাওর তলিয়ে যায়নি। কৃষকরা ধান কাটছেন।
কৃষক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারসংলগ্ন কান্দার বাঁধে ২ এপ্রিল থেকে পানির চাপ বাড়ছে। তিন দিন ধরে সীমান্ত নদী পাটলাই ও যাদুকাটায় পানি বাড়ায় টাঙ্গুয়ার হাওরের ভেঙে যাওয়া নজরখালি বাঁধ দিয়ে প্রবাহ বেড়ে যায়। গতকাল রোববার ভোররাতে গোলাবাড়ী ক্যাম্পসংলগ্ন ওয়াচ টাওয়ারের কাছের কান্দার বাঁধ উপচে বর্ধিত গুরমার হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে। স্থানীয়রা বাঁশ, বস্তা ও চাটাই দিয়ে বাঁধ বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
ভেঙে যাওয়া বাঘমারা ও নোয়াল বাঁধ দুটি টাঙ্গুয়ার হাওরসংলগ্ন বর্ধিত গুরমার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) যথাক্রমে ২৩ ও ২৭ নম্বর প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। বর্ধিত গুরমা ফসল রক্ষা বাঁধ নামে ২৮টি প্রকল্প আছে। এর মধ্যে ১৭টি প্রকল্প টাঙ্গুয়ার হাওরের পাশ দিয়ে গেছে। এসব বাঁধের যেকোনো একটি প্রকল্পের সামান্য অংশ ভেঙে গেলে সব প্রকল্পই অকার্যকর হয়ে পড়বে। ২৮টি প্রকল্পে প্রায় পাঁচ কোটি টাকারও বেশি কাজ হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে গঠিত ২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে এসব কাজ বাস্তবায়ন করেছে। স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণে নকশায় ত্রুটি করেছে। তাঁদের কথাও আমলে নেয়নি।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বাঁধ দুটি ভেঙে যাওয়ায় গলগলিয়া, নোয়াল, কাউয়ার বিল, কাউজ্জাউরি, গাঁওর কিত্তা (ভবানীপুর), কলমা ও শালদিঘা হাওরে আবাদ করা বছরের একমাত্র ফসল বোরো ধান তলিয়ে যাবে। এসব হাওরে তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ও মধ্যনগর উপজেলার দক্ষিণ বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নে আট হাজার ৩০০ একর জমিতে ধান আবাদ করেছেন কৃষকরা। এর মধ্যে তাহিরপুর অংশে ছয় হাজার একর আর মধ্যনগর অংশে দুই হাজার ৩০০ একর।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম জানান, গত ১৫ দিনের পাহাড়ি ঢলের ধকল এবং দ্বিতীয় দফা পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ২৭ নম্বর প্রকল্পের বাঁধ ধসে গেছে। এ ছাড়া টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারের কান্দা উপচে একই হাওরে পানি ঢুকছে। পানির প্রবাহ যাতে তাহিরপুর ও ধর্মপাশার অন্য হাওরগুলোতে চাপ সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য আমরা বিকল্প আরেকটি ছায়া বাঁধ দিচ্ছি।