কক্সবাজারে তিনব্যাপী রাখাইনদের বর্ষ বরণ ও জলকেলি উৎসবে মেতে উঠেছেন রাখাইন সম্প্রদায়। রোববার (১৭ এপ্রিল) সকাল থেকে শুরু হয়েছে নতুন ১৩৮৪ রাখাইন বর্ষ। চলবে আগামী মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) পর্যন্ত।
উৎসব আয়োজকরা জানান, করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর কক্সবাজারে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে চলছে তিন দিনব্যাপী রাখাইনদের জলকেলি উৎসব বা মাহা সাংগ্রেং পোয়ে। সর্ববৃহৎ এ সামাজিক উৎসবকে ঘিরে রাখাইন পল্লীগুলো বইছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। আর এতে শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীরা নাচে-গানে মেতে উঠেছেন। প্রতিবছর রাখাইন বর্ষকে বিদায় এবং বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে আয়োজন হয় এ উৎসবের। রাখাইন সম্প্রদায়ের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে উৎসবস্থল। জলকেলি বা সাংগ্রেং পোয়ে ধর্মীয় কোনো রীতি নয়, সামাজিক রীতি মতে রাখাইন সম্প্রদায় এই উৎসবের আয়োজন করে থাকে।
রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি মংছেন হ্লা রাখাইন বলেন, ‘উৎসব উপলক্ষে রোববার সকালে প্রতিটি রাখাইন পল্লী থেকে আবাল-বৃদ্ধ বনিতা শোভাযাত্রা সহকারে বৌদ্ধ বিহারে যান। এতে অল্প-বয়সীরা মাটির কলস এবং বয়স্করা কল্পতরু বহন করেন। এরপর সেখানে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পর্ব শেষ করেন। বিকেলে তরুণ-তরুণীরা বাদ্যযন্ত্র সহকারে দলবেধে ঘুরে বেড়ান জলকেলি উৎসবের প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে। এবার জেলায় অন্তত অর্ধ-শতাধিক প্যান্ডেলে এ উৎসব পালিত হচ্ছে।’
সভাপতি মংছেন হ্লা রাখাইন আরও বলেন, ‘জলকেলি উপলক্ষে নানা প্রজাতির ফুল আর রঙ-বেরঙের কাগজে সাজানো হয় প্রতিটি প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের মাঝখানে থাকে পানি রাখার ড্রামসহ নানা উপকরণ। এতে পানির রাখার এসব উপকরণের এক পাশে অবস্থান করেন তরুণীরা আর অন্য পাশে থাকেন তরুণের দল। তারা নাচে-গানে মেতে উঠে একে অপরের প্রতি ছুড়তে থাকেন মঙ্গলজল। রাখাইনদের বিশ্বাস, এই মঙ্গলজল ছিটানোর মধ্য দিয়ে মুছে যায় পুরাতন বছরের ব্যাথা, বেদনা, গ্লানি, সকল অমঙ্গল, অপ্রাপ্তি আর অসঙ্গতি। এতে নতুন বছরকে শুচিতার মাধ্যমে বরণ করা হয়ে থাকে সকলের মঙ্গল কামনায়।’
রাখাইনদের এ কমিউনিটি নেতা জানান, জলকেলি উৎসব চলবে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত। এতে জলকেলি ছাড়াও উৎসবস্থলে আয়োজিত হবে রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
আদিবাসী ফোরাম কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মংথেন হ্লা রাখাইন জানান, রাখাইন বর্ষ বিদায় ও বরণকে ঘিরে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নানা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে রাখাইন পল্লীগুলো। এতে প্রধান আকর্ষণ জলকেলি বা সাংগ্রেং পোয়ে। আর রাখাইন তরুণ-তরুণীরা সারাবছর মুখিয়ে থাকে এই উৎসবের জন্য। রাখাইন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব তাদের জাতিসত্তার অন্যতম পরিচায়ক।