বাংলাদেশের অবস্থা অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কার মতো না হলেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিদেশি ঋণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) বহুজাতিক এই আর্থিক সংস্থার সাউথ এশিয়া ইকোনমিক আপডেট প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ হান্স টিমার এই পরামর্শ দেন।
এর এক দিন আগেই দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কটে বিদেশি ঋণ পরিশোধে নিজেদের অপারগতা প্রকাশের কথা জানায়। মাথাপিছু আয়ে বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কার হাল দেখে বাংলাদেশে কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করলেও সরকার আশ্বস্ত করছে, তেমন আশঙ্কার কিছু নেই।
হান্স টিমার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে বলেন, “বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থানে নেই কারণ বিদেশি ঋণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম এবং তা মাত্র জিডিপির ১৭% এর মতো। আর এই ঋণের বড় অঙ্ক বিশ্বব্যাংকের মতো বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্প সুদ আর সহজ শর্তের ঋণ।”
তবে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় ঋণ বাড়তে দেখার কথা জানিয়ে বিশ্বব্যাংকের এই কর্মকর্তা বলেন, “মধ্যম আয়ের যে কোনো দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় ঋণ খুব উপযোগী হতে পারে। কেননা, বিদেশিরা অর্থনীতিতে যুক্ত হলে বেশি সুফল পাওয়া যায় এবং এটা বেশ কার্যকর। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় এই ঋণের অর্থায়ন কতটা উৎপাদক্ষম হচ্ছে সেই ব্যাপারে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।”
বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই কম হওয়ায় তা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে সরকারকে পরামর্শ দেন তিনি।
শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা নিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে অর্থনীতিবিদ টিমার বলেন, “এখনও বাংলাদেশে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। এটা ছয় মাসের বেশি সময় আমদানি চালিয়ে যেতে সক্ষম। এটা একটা সন্তোষজনক পরিস্থিতি। কিন্তু এটা এখন দেশীয় মুদ্রার অস্থিরতা সামাল দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, আবার উন্নয়ন বিনিয়োগের জন্যও ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে; বৈদেশিক মুদ্রার এমন ব্যবহারের ক্ষেত্রে শক্ত নিয়ন্ত্রণ রাখা উচিত।”
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির আগের পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রেখে বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে এ হার হবে ৬.৪%। আর পরবর্তী ২০২২-২৩ অর্থবছরে হতে পারে ৬.৭%।
প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ভালো অবস্থায় আছে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “ঋণ নিয়ন্ত্রিত অবস্থায়, বিশেষ করে বৈদেশিক ঋণ কমই আছে।”
তবে ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকায় মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়তে পারে। আর ইউরোপের বাজারে চাহিদা কমলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ে ধাক্কা আসতে পারে বলে সতর্ক করেন টিমার।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা শিথিল হওয়ার মধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকায় তৈরি পোশাক রপ্তানির ধারা বহাল রাখতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত অবস্থানেই থাকবে। তবে, রপ্তানির শীর্ষ গন্তব্য, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে আসলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও শ্লথ হতে পারে।
তবে, অভ্যন্তরীণ চাহিদার উপর ভর করে ২০২২-২৩ সালের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে বলেই মনে করছে বিশ্বব্যাংক৷