ফরিদপুরের সালথায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। সংঘর্ষে ১৭টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
সোমবার (১১ এপ্রিল) রাতে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে অন্তত ৫টি গ্রামের দেড় হাজার লোক অংশ নেয় বলে জানা গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শর্টগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আটঘর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্রে করে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম খান সোহাগের সঙ্গে গত ইউপি নির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. বকুল মাতবরের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ব্যক্তি জানান, সোমবার সন্ধ্যায় ইফতার শেষে আটঘর ইউপি চেয়ারম্যান সোহাগের অনুসারী খোয়াড় গ্রামের জালাল শেখ ও রবিউল শেখের সঙ্গে বকুল মাতবরের অনুসারী আমিনুল মাতবরের সমর্থক খবির শেখের বাগ্বিতণ্ডা হয়। বিষয়টি উভয় গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে জানাজানি হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উভয় গ্রুপের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র হাতে জড়ো হয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে সেনাটি, গোবিন্দপুর, সিংহপ্রতাপ, গোয়ালপাড়া ও বালিয়া গ্রামের দেড় সহস্রাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অংশ নেন। এসব গ্রামের লোকজন খোয়াড় গ্রামের সঙ্গে জোট বেঁধে গ্রাম্য দল করেন বলে জানা গেছে। এতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় চলে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, সংঘর্ষ ও বাড়িঘর ভাঙচুর। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষে রাজিব মোল্লা, ইস্রাফিল শেখ, বজলু মাতবর, ফিরোজ মাতবর, আহম্মদ মাতবর ও জালাল শেখসহ উভয় গ্রুপের অন্তত ১০ জন আহত হন। এর মধ্যে রাজিব মোল্লা, ইস্রাফিল শেখ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া গুলিবিদ্ধ দুই জনকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বকুল মাতবরের সমর্থক আমিনুল মাতবর বলেন, ‘‘সামান্য ঘটনা নিয়ে সামাদ মাতবর তার দল নেতা ইউপি চেয়ারম্যান সোহাগকে বলে গোয়ালপাড়া, সেনাটি, গোবিন্দপুর ও সিংহপ্রতাপ থেকে শত শত লোক এনে আমার লোকজনের ওপর হামলা চালায়। আমার দলের নিজাম শেখের তিনটি ও সত্তার মাতবরের দুইটি বসতঘর ভাঙচুর করে। পরে আমার লোকজন প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষ শুরু হয়।’’
ইউপি চেয়ারম্যান সোহাগের সমর্থক সামাদ মাতবর বলেন, ‘‘গ্রাম্য দলপক্ষ নিয়ে কাটাকাটির জের ধরে আমিনুল মাতবর বালিয়া গ্রাম থেকে অনেক লোকজন এনে আমার লোকজনের ওপর হামলা করে। এর ফলে মোহাম্মাদ ফকিরের দুইটি, কুদ্দুস মাতবরের তিনটি, মানিক মাতবরের তিনটি, জালাল শেখে দুইটি ও শুকুর মশালচীর দুইটি বসতঘর ভাঙচুর করে তারা।’’
সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান বলেন, ‘‘গত এক বছরের মধ্যে এত বড় সংঘর্ষের ঘটনা সালথায় হয়নি। সংঘর্ষে কয়েক গ্রামের দেড় সহস্রাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্র হাতে অংশ নেয়। থানা ও জেলা পুলিশ সংঘর্ষের মাঝে অবস্থান নিয়ে প্রথমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পরে শর্টগানের ১৫টি গুলি ও দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এলাকার পরিবেশ এখন শান্ত। তবে ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’’
দুই জনের গুলিবিদ্ধ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এ রকম কথা আমি শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। যদি এ ঘটনা ঘটে তাতে প্রমাণ হয়, ওই দুইজন সংঘর্ষে অংশ নিয়েছিল। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’’