‘‘আমরা ছাত্রলীগ, যেখানে যাব সেখানেই বুলেট। রোজা থেকে পরীক্ষা দিচ্ছি, গোল্ডেন এ প্লাস পাবো। পরীক্ষার খাতায় গ্রুপের জায়গা লিখে দিয়েছি, ‘‘এমপি আনার গ্রুপ’’ (স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার)। স্যাররা এ প্লাস না দিলে বোর্ডমোড ভেঙে ফেলবো।’’
পরীক্ষার হল থেকে ফেসবুক লাইভে এসে কথাগুলো বলছিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন ওরফে সুমন। তিনি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন বিষয়ের ছয় মাসমেয়াদি কোর্সের শিক্ষার্থী।
শুক্রবার (৮ এপ্রিল) ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মনির হোসেনসহ ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা ওই কোর্সের পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই তিনি ৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের জন্য লাইভে আসেন।
ফেসবুক লাইভে মনির হোসেন বলেন, ‘‘আমাদের পরীক্ষা চলছে, সবাই লিখছে আমি বসে আছি। সবাই লিখছে বাংলায়, আমি তো বাংলায় লিখি না, ইংলিশে লিখি। অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল পরীক্ষার হলে ফেসবুকে লাইভ করব। সেই ইচ্ছা আজ পূরণ হলো। ম্যাডামও দেখি আমাকে ভিডিও করছে। স্যাররা ঘুমাচ্ছে, আমি ইংরেজিতে লিখেছি, সালামও লিখেছে।’’
একপর্যায়ে পাশের শিক্ষার্থীর কাছে মনির হোসেন জানতে চান, ‘‘দেখি, তুই কী লিখেছিস?” তখন ভিডিওতে দেখা যায়, সে লিখেছে, “না লিখে আমরা এ+ পেতে চাই।”
লাইভে ছাত্রলীগ নেতা আরও বলেন, ‘‘ওই পাশে একটা খালা পরীক্ষা দিচ্ছে। আমাদের ভিডিও ভাইস চেয়ারম্যান দেখছে, ভাইস চেয়ারম্যান মন্তব্যে লিখেছে , গল্প না করে তোরা খাতায় লেখ। এমপি সাহেবও দেখছেন নাকি, তিনি আর ভাইস চেয়ারম্যান এক মোটরসাইকেলে আছেন।’’
লাইভে অন্যদের উদ্দেশে মনির হোসেন বলেন, ‘‘কী সুন্দর পরীক্ষার হল, পরীক্ষা দিচ্ছি। অ্যাই, তোরা তো জীবনে পরীক্ষা দিতে পারবিনে, এই দেখ সালামও আছে। পরীক্ষার হলে লাইভে আছি, আমার প্রাণের সংগঠন কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ প্লাস তো পাবই, ম্যাডামরা সবই বলে দিচ্ছে। পরীক্ষার খাতায় গ্রুপের জায়গা লিখে দিয়েছি, ‘এমপি আনার গ্রুপ’। জয়ও তাই লিখেছে।’’
লাইভের একপর্যায়ে তিনি পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত এক শিক্ষিকাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘‘ম্যাডাম, আপনি কিছু বলেন আমার লাইভে?’’
এ সময় পরীক্ষার হলে অর্ধশত শিক্ষার্থী ছিলেন। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতা মনির প্রিজম কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্র নামের যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন সেখানকার শিক্ষক সমির দাস ও তার সহযোগী নওরিন আক্তারও উপস্থিত ছিলেন। পরীক্ষার হল থেকে এভাবে ফেসবুক লাইভে আসায় অনেকেই সমালোচনা করেন। একপর্যায়ে ফেসবুক থেকে ভিডিওটি সরিয়ে নেন মনির হোসেন।
এ বিষয়ে প্রিজম কম্পিউটার প্রশিক্ষণকেন্দ্রের পরিচালক বসির আহম্মেদ চন্দন বলেন, ‘‘আমার প্রতিষ্ঠানের ১১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে। যাদের মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা সুমন একজন। এভাবে পরীক্ষার হল থেকে লাইভ করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দেখার দায়িত্ব ছিল। কারণ, পরীক্ষা তারা নিচ্ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠানের দুজন কেবল সেখানে সহযোগিতা করার জন্য ছিলেন।’’
কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান নাজিম বলেন, ‘‘পরীক্ষার হলে লাইভ করা ঠিক নয়। তবে সাধারণ সম্পাদক লাইভে এসে কী বলেছে, সেটি এখনো আমি জানি না। বিষয়টি শুনলাম, খতিয়ে দেখা হবে।’’
অভিযোগের বিষয়ে ফেসবুক লাইভে আসা ছাত্রলীগে নেতা মনির হোসেন বলেন, ‘‘আমি তো পরীক্ষা চলাকালে লাইভ করিনি, পরীক্ষা শেষ হলে ছোট একটা লাইভ করেছিলাম।’’
তবে ওই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা চলে। আর ১১.৩০ মিনিট থেকে দুপুর ১২.৩০ মিনিট পর্যন্ত প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা হয়। দুপুর ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে আসেন ছাত্রলীগ নেতা মনির হোসেন।
ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাডেমিক দায়িত্বে থাকা মাহবুব উল ইসলাম বলেন, ‘‘পরীক্ষা শেষে অভ্যন্তরীণ কিছু কাজ চলছিল। এর দায়িত্বে ছিলেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা। সেই সময়ে লাইভটি করা হয়। তবে এটা খুবই খারাপ কাজ হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’