মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কথায় বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করেন বলে জানিয়েছেন স্কুলের মামলার বাদী ইলেকট্রিশিয়ান মোঃ আসাদ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে ধর্ম অবমাননাকর কিছু বলতে শুনিনি। শুধু প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে মামলার বাদী হয়েছি।
তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল ভালো লোক, ভালো শিক্ষক। আমি দশ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। কোনোদিন কারও সঙ্গে তার ঝগড়া বা দ্বন্দ্বের কথা শুনিনি। ঘটনার দিন আমি স্কুলেই ছিলাম। শিক্ষার্থীরা যখন বিক্ষোভ করছিল, তখন তাঁদের কাছ থেকে শুনেছি শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল ধর্ম অবমাননা করে ক্লাসে কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীরা নাকি তা রেকর্ডও করেছে। কিন্তু, সে সব কিছু আমি শুনিনি। তবে প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে আমাকে মামলার বাদী বানানো হয়েছে। ঘটনা নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক ও পুলিশ সদস্যরা নিজেদের মধ্যে অনেক কথাবার্তা বলেছেন। তবে, সেসব আমি কিছুই জানি না।’
হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলার বাদী আসাদ আরও বলেন, ‘আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। মামলার বা আইনের কোনও ধারা বুঝি না। এমনকি ঠিকমতো রিডিংও পড়তে পারি না। এজাহার লিখে আমার সামনে পাঠ করে শোনানো হয়েছে। তারপরে আমি স্বাক্ষর দিয়েছি।’
তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহম্মেদ দাবি করেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে আমি পুলিশকে খবর দেই। পরে পুলিশ শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়। আসাদকে কে বা কারা মামলার বাদী হতে বলেছে, তা আমি জানি না। এছাড়া শিক্ষককে শোকজ দেওয়া ও পুলিশকে খবর দেওয়া আমার একার সিদ্ধান্ত নয়। স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধি এবং স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করেই সব করা হয়েছে। স্কুল শুধু প্রধান শিক্ষক একা চালান না।’
উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ সকালে ক্লাস চলাকালে বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা, তাতে যোগ দেয় অত্র এলাকার কিছু মানুষ। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহম্মেদ পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের ইলেকট্রিশিয়ান মোঃ আসাদ বাদী হয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে মামলা করেন। গত ৪ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জ আমলি আদালত-১-এ শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে হৃদয় মণ্ডলকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে রবিবার (১০ এপ্রিল) আবারও জামিন শুনানি হবে বলে জানা গেছ।