ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরুল ইসলাম (৫৫) এবং উপ-পরিদর্শক (এসআই) উত্তম কুমার সেনের (৫০) বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা (নালিশি দরখাস্ত) দেওয়া হয়েছে । বুধবার (৭ এপ্রিল) ফরিদপুরের সাত নম্বর আমলী আদালতে এ অভিযোগ করেন মো. আতিয়ার রহমান নান্টু (৫০) নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বোয়ালমারী উপজেলার দাঁদপুর ইউনিয়নের চিতার বাজার এলাকার বাসিন্দা।
ফরিদপুর সাত নম্বর আমলী আদালতের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তরুণ বাছাড় অভিযোগটি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ২৬ মে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মো. আতিয়ার রহমান ২০০০ সালের ২৩ মে বোয়ালমারীর পৌরসভার ওয়াপদার পাশে মৃত রশিদ মোল্লার স্ত্রী ও চার মেয়ের কাছ থেকে দুটি দলিলে ১০.৫০ শতক জমি কেনেন। সেখানকার দুই শতক জমিতে দোকান নির্মাণ করে হার্ডওয়ারের ব্যবসা করে আসছিলেন তিনি।
এদিকে, জমি বিক্রেতাদের সঙ্গে ওয়ারিশসূত্রে বোয়ালমারী সোতাশী এলাকার দুই ভাই মো. ইয়াকুব হোসেন (৩০) ও মো. বেলায়েত হোসেনের (৩৫) বিরোধ চলে আসছিল।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর ওই দুই ভাই গুদামঘর দখলের চেষ্টা করলে আতিয়ার রহমান বোয়ালমারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ওসির কক্ষে গেলে তিনি আতিয়ারের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। আতিয়ারও সেই অর্থ ওসিকে দেন।
অভিযোগে বলা হয়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ওই দুই ভাই তার গুদামের তালা ভেঙে সিমেন্টের বস্তা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আতিয়ার বিষয়টি দ্রুত ওসিকে জানান। তখন ওসি তার কাছে আবারও ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এবার তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান।
জবাবে ওসি “বেশি বাড়াবাড়ি করলে” আতিয়ারকে মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করার হুমকি দেন। তখন এসআই উত্তম তাকে চড়, কিল-ঘুষি মেরে বের করে দেন।
আতিয়ার বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপার, ঢাকা রেঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ডিআইজি), মহাপুলিশ পরিদর্শক এবং বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ আকারে জানান।
আতিয়ার রহমান অভিযোগে বলেন, “স্থানীয়ভাবে এবং বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ ব্যাপারে কোনো সুরাহা না পাওয়ায় তিনি আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন।”
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ওসি মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, “অভিযোগ দেওয়ার ও মামলা করার স্বাধীনতা মানুষের আছে। তবে যে অভিযোগে মামলা করেছে তা সত্য নয়। আমি বোয়ালমারীতে আছি, নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। টাকার জন্য কাউকে হয়রানি করেছি এমন কোনো রেকর্ড নেই, কেউ বলতেও পারবে না। এটি সম্পূর্ণ হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা।”
আদালতে দেওয়া এ অভিযোগ নিয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিং করেন।
তিনি বলেন, “আতিয়ার রহমান গত ৬ মার্চ তার কাছে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরদিন ৭ মার্চ এক তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ওই তদন্ত কর্মকর্তা আতিয়ার রহমানসহ ২১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। এ তদন্ত চলমান রয়েছে।”
পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, “বুধবার আতিয়ার রহমান পুলিশের নির্ধারিত তদন্ত কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট একটি লিখিত কাগজও পৌঁছে দেন। অথচ একই দিন তিনি আদালতে গিয়ে অভিযোগ করেন যাতে অগের অভিযোগের চেয়ে নতুন নতুন অনেক কথা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বলেছেন, স্থানীয়ভাবে ও বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ ব্যাপারে কোন সুরাহা না হওয়ায়, তিনি অভিযোগ দায়ের করেন।”
দুঃখপ্রকাশ করে পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান বলেন, “ওই ব্যক্তি তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যেদিন সংশ্লিষ্ট কাগজ দেন আবার সেদিনই তিনি আদালতে একই বিষয়ে অভিযোগ দেন। ঘটনাটি আমার বোধগম্য হচ্ছে না।”
এবিষয়ে আতাউর রহমানের আইনজীবী লুৎফর রহমান পিলু। বুধবার রাতে তিনি বলেন, “আতাউর রহমান আদালতে একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এটি সত্য নাকি মিথ্যা এ ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়ায় তা যাচাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আদালত পিবিআইকে তদন্তের ভার দিয়েছেন।”
আইনজীবী লুৎফর রহমান আরও বলেন, “পিবিআই এর তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে অভিযোগটি মামলায় পরিণত হবে, সত্য প্রমাণিত না হলে খারিজ হয়ে যাবে।”