সীমান্তের ওপার ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা, যাদুকাটা, কুশিয়ারাসহ সকল নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ঝুঁকিতে পড়েছে অনেক হাওরের বাঁধ। অতিরিক্ত পানির চাপে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বহু বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে একের পর এক হাওর ডুবছে। এতে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল ) বিকাল ৫টায় জেলার শাল্লা উপজেলার কৈয়ারবন ও পুটিয়া হাওরে বাঁধ ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে ধান। এই দুই হাওরে প্রায় ৪০ হেক্টর ফসলি জমি পানির প্রবল স্রোতে তলিয়ে গেছে। তবে এই বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো’র) আওতার বাহিরে বলছে কর্তৃপক্ষ।
গত তিনদিন ধরে স্থানীয় কৃষকরা দিনে রাতে মাটি কেটেও বাঁধটিকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি। স্থানীয়রা পাউবোকে দোষারোপ করে জানান, শাল্লা ব্রিজের পাশে হাওর রক্ষা বাঁধের একটি প্রকল্প দিলে অকাল বন্যায় চোখের সামনে তলিয়ে যেত না এই ফসলি জমি। অন্যান্য বছর এই জায়গায় প্রকল্প দেওয়া হলেও এ বছর কোনো প্রকল্প না দেওয়ায় অকাল বন্যায় তলিয়ে গেল ফসলি জমি।
তারা আরও জানান, কাঁচা ধান তলিয়ে গিয়ে কৃষকদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। নিঃস্ব হয়ে গেছে কয়েকটি গ্রামের কৃষক।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঘুঙ্গিয়ারগাঁও ও ডুমরা গ্রামের লোকজন এই হাওরে জমি করেছে। এই দুই গ্রামের ফসল হারিয়ে দিশেহারা। এলাকাবাসীর দাবি, প্রায় ৬০/৭০ হেক্টর জমি অকাল বন্যায় ভেঁসে গেছে। তবে প্রশাসনের দাবি, ৪০ হেক্টর জমি।
শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) আবু তালেব জানান, কৈয়ারবন ও পুটিয়া হাওরে প্রায় ৪০ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে এই বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতার বাহিরে। এরপরও আমরা চেষ্টা করেছি ফসলি জমি রক্ষা করার। কিন্তু উজানের পাহাড়ি ঢল ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আর রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কৈয়ারবন ও পুটিয়া হাওরে ৪০ হেক্টর জমি বোরো চাষ হয়েছে। তবে এই হাওরের কোনো ফসলি জমি এখনও কাটা হয়নি।
এ ছাড়াও জেলার ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার তাল হাওরে বাঁধ ভেঙে কয়েক হাজার কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৫টায় বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢোকা শুরু হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রবল বেগে পানি ঢুকে তলিয়ে যায় হাওর।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, চন্দ্রসোনার তাল হাওর ডুবে ১৮৫ হেক্টর জমির ফসল প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে ধর্মপাশা উপজেলার কৃষকদের অভিযোগ, হাওরের বরুণ কাইচ্ছা বাঁধ দুর্বল হয়ে যাওয়ার কথা আগে থেকেই বলে আসছিলেন তারা। তারপরও বাঁধটি রক্ষায় তেমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, বাঁধ ভাঙায় কমপক্ষে ২ হাজার হেক্টর ফসল ডুববে। বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, বারহাট্টার কিছু অংশের ফসল ডুবে যাবে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সন্ধ্যার দিকে বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকতে থাকে। আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে ভাঙনের মুখ বন্ধ করে পানি আটকানো যায়।