তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একের পর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে ফরিদপুরের বিভিন্ন গ্রামে। কয়েকদিন আগে জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় সিগারেট জ্বালানোর জন্য লাইটার চাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই তরুণের হাতাহাতির জেরে মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুইদল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার ঘটনার রেষ না কাটতেই এবার একই উপজেলায় বিবাদমান দুই পক্ষের নেতৃত্বে চার গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এ সংঘর্ষের সময় দুটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ১৩টি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। এ সংঘর্ষে আহত হয়েছে ২৫জন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ)দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের সহস্রাধিক মানুষ ঢাল,সড়কি, বল্লম,টেটা ও ইট নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
এ সংঘর্ষে ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুড়িয়া,ব্রাহ্মণকান্দা, খাকান্দা ও নাজিরপুর গ্রামের বাসিন্দারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে ওই এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মানিকদহ ইউপির সাবেক ইউপি সদস্য পুখড়িয়া গ্রামের করিম মাতুব্বর ও ব্রাহ্মণকান্দা গ্রামের ইয়াকুব আলী মিয়া একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন।
অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন পুখরিয়ার তুহিন খা ও খাকান্দা গ্রামের কালাম মোল্লা।
সংঘর্ষের সময় তুহিন খা ও কালাম মোল্লার সমর্থক খাকান্দার সেকেন ভুইয়া ও পুখড়িয়ার হারুণ মিয়ার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরা দুইজন তুহিন খার সমর্থক।
এছাড়া সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষের অন্তত ১৩টি বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এসময় বেশ কয়েকটি গরু লুট করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
আহতদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ এ পর্যন্ত লুটপাট করে নেওয়া চারটি গরু উদ্ধার করেছে।
এলাকাবাসী জানায়, এই দুই পক্ষের মধ্যে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত কয়েক বছর ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধের জেরে এর আগে কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘরে ঘরে তল্লাশি করে অস্ত্রও উদ্ধার করেছে।বিবাদ নিরসনে পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান শান্তি সমাবেশও করেছেন। কিন্তু কয়েকদিন বন্ধ থাকার পরপর আবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।
জানা গেছে, বিবাদমান দুই পক্ষই ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসনের বর্তমান স্বতন্ত্র দলীয় সাংসদ মজিবুর রহমান নিক্সনের সমর্থক। গত ২১ মার্চ সাংসদ নিক্সন ভাঙ্গার কাউলিবেড়া এলাকায় এক জনসভা করেন। ওই সভায় যোগ দেন এই দুই পক্ষের লোকজন।
সভা থেকে ফেরার পথে তুহিন খার সমর্থক ব্রাহ্মণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আতিকর কাজীকে পুখুরিয়া রেল স্টেশন এলাকায় কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে ভাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সম্প্রতি পুলিশ ওই মামলার আসামি হিসেবে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। এর জের ধরেই বৃহস্পতিবার এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) ফাহিমা কাদের চৌধুরী বলেন, “সংঘর্ষের খবর শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”