আগামী অক্টোবরে সুন্দরবনে শুরু হতে যাচ্ছে বাঘশুমারি। “সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প”-এর আওতায় ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে এই শুমারিতে ব্যয় হবে প্রায় ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো ও সুন্দরবনের পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৩ মার্চ “সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প” শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ ও সুরক্ষার কাজ করা হবে। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত।
এই প্রকল্পের আওতায় বাঘ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে এমন দেশে অভিজ্ঞতা অর্জনে ২০ জন সরকারি কর্মকর্তা শিক্ষা সফরে যাবেন। এছাড়া ৫০০ জনের বিশেষ প্রশিক্ষণের সংস্থান এ প্রকল্পে রাখা হয়েছে।
মিহির কুমার দো জানান, এ প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনে বাঘ গননা, বাঘ গননার জন্য আবাসন লঞ্চ ও সাপোর্ট বোট ৪ মাসের জন্য ভাড়া করা, ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনার জন্য ২০০টি বিশেষ ক্যাটাগরির ক্যামেরা সংগ্রহ, ব্যাটারি, এসডি কার্ড ক্রয়, জরিপ দলে অনিয়মিত শ্রমিক, ট্রলার চালক ও জরিপের সকল কার্যক্রম পরামর্শক বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে পরিচালনা, জরিপ দলের সকল সদস্যকে প্রশিক্ষণ প্রদান, উপাত্ত সংগ্রহ ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের জন্য ৩ কোটি ২৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে।
এছাড়া বাঘের শিকার প্রাণি হরিণ, বন্য শুকর ইত্যাদি প্রাণির জরিপ, সুন্দরবনের বাঘ স্থানান্তর, অন্তত দুটি বাঘে স্যাটেলাইট কলার স্থাপন ও মনিটরিং করা, বাঘের পরজীবির সংক্রমণ ও অন্যান্য ব্যাধি এবং মাত্রা নির্ণয়, উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ ইত্যাদি কার্যক্রম এ প্রকল্পটির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাঘের আবাসস্থল সুন্দরবনে প্রায় প্রতিবছর আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুষ্ক মৌসুমে সুন্দরবনের যে অংশে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি সে জায়গায় দুটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ ও সুন্দরবনে আগুন লাগলে যাতে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নেভানো যায়, আগুন নেভানোর যন্ত্রাংশ, পাইপ ও ড্রোন ক্রয় ইত্যাদি কার্যক্রমও এ প্রকল্পের মাধ্যমে করা হবে।
এছাড়া, সুন্দরবনে বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে গ্রাম সংলগ্ন এলাকায় নদী ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বাঘ গ্রামে প্রবেশ করে জানমালের নিরাপত্তা হুমকি হয়ে থাকে। এজন্য ৬০ কিলোমিটার অংশে নাইলনের ফেন্সিং নির্মাণ করে বাঘমানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সুন্দরবন ২০০৭ সালে সিডর, ২০০৯ সালে আইলা ও ২০২১ সালে ইয়াসের মত বড় বড় ঘুর্ণিঝড় ও জলেচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায। তখন বনের বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণি আশ্রয়ের জন্য লোকালয়ে প্রবেশ করে। বাঘ ও বাঘের শিকার প্রাণি ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়ের জন্য সুন্দরবনে ১২টি মাটির কিল্লা স্থাপন করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বের ১৩টি দেশে ৩৮৪০টি বাঘ প্রকৃতিতে টিকে আছে। ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ১১৪টি, ২০১৫ সালে ছিল ১০৬টি।