নিউ দিল্লি বঙ্গ সংস্কৃতি ভবনের অডিটোরিয়ামে ২৭ মার্চ ২০২২, দিল্লি বইমেলার শেষ দিনে দিল্লির ও কলকাতার কবিদের সঙ্গে কবিতাপাঠে দাগ কাটেন কবি ও উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশনের সম্পাদক ফারুক আহমেদ। এদিন কবিতা পাঠ করেন কবি চঞ্চল ভট্টাচার্য, শাস্বতী নন্দ, পীযূষকান্তি বিশ্বাস, গোপা বসু, প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, রীতা বিশ্বাস পান্ডে, সৈয়দ হসমত জালাল, গৌতম দাশগুপ্ত। সমগ্র কবিতাপাঠ পরিচালনায় ছিলেন কবি পৃথা দাশ।
‘লেখকের মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকতা ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করলেন সৈয়দ হাসমত জালাল ও সাংবাদিক লেখক সমৃদ্ধ দত্ত৷ তাঁদের সঙ্গে কথা বললেন সৌরাংশু সিংহ। চমৎকার বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন বিষয়কে উসকে দিলেন তিনি৷
প্রকাশিত হলো ‘দিগঙ্গন’ পত্রিকা। বইমেলা উপলক্ষে অত্যন্ত দ্রুত এরকম একটি পত্রিকা সম্পাদনা করে প্রকাশ করার জন্য ব্রততী সেনগুপ্তকে অশেষ সাধুবাদ জানাতেই হয়।
এদিন বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মধ্যে সেরা বাঙালি হিসেবে সম্মাননা জ্ঞাপন করল গুড়গাঁও-বাসী শ্যামল গুহকে। এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রের দশজন বাঙালিকে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য সম্মান জানালো বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন।
প্রধান অতিথি পবিত্র সরকারকেও সম্মাননা জ্ঞাপন করা হলো। তাঁর ৮৫তম জন্মদিন উপলক্ষে মঞ্চে কেক কেটে তাঁকে জানানো হল শ্রদ্ধা। আবেগঘন এই মুহূর্তটি স্মরণে থেকে যাবে। কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে এলো পবিত্র সরকারের।
এরপরই ছিল একটি শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশন। নৃত্যশিল্পী দেবস্মিতার নৃত্য মুগ্ধ করেছে দর্শকদের।
এরপর সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় এবারের বইমেলা ও বঙ্গ সংস্কৃতি উৎসব।
উৎসব চলেছে চারদিন ধরে, যত মানুষের সমাগম হয়েছিল আর যে সুচারুভাবে পরিচালনা করা হয়েছে সব কিছু, তা আগত সমস্ত অতিথিদেরকে বিস্মিত করেছে।
করোনাকাল কাটিয়ে দিল্লিতে বইমেলা ফিরে আসায় প্রবাসী বাঙালির মধ্যে প্রাণোচ্ছল সাড়া পাওয়া গিয়েছে৷ প্রতিদিনই ঐতিহ্যবাহী দিল্লির বেঙ্গলি স্কুলগুলির ছাত্রছাত্রীরা নানাবিধ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।
বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন দিল্লী বইমেলা ও সাহিত্য উৎসবের দ্বিতীয় দিনটি অসাধারণ কয়েকটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অতিবাহিত হয়েছে।
যথারীতি বিনয়নগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ইউনিয়ন একাডেমী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু করে দিল্লীর কবিদের কবিতা পাঠ, আলোচনা সভা, ছাড়াও বিশিষ্ট কবি সুবোধ সরকারের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। সম্বর্ধনা প্রদান করেন অ্যাসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক শ্রী তপন সেনগুপ্ত। কবি কন্ঠে কবিতাপাঠ উপস্থিত শ্রোতাদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের ছিলো। মনোজ্ঞ এক আলোচনা করেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের মিরান্ডা হাউস কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা ড. শাশ্বতী গাঙ্গুলি৷ কবিদের গদ্য লেখা নিয়ে এক মনোগ্রাহী বিশ্লেষণ পাওয়া গেল সুবোধ সরকারের কাছ থেকে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করলেন নয়ডার উজান সঙ্গীত সংস্থা ও চিত্তরঞ্জন পার্ক বঙ্গীয় সমাজের শিল্পী বৃন্দ।
অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা ও উপস্থাপনার কাজটি করেছেন পৃথা দাশ, শাশ্বতী গাঙ্গুলী ও শম্পা বসুরায়।
২৬ মার্চ ২০২২ দিল্লি বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশনের বইমেলায় ‘মুক্তধারা’ প্রেক্ষাগৃহে এদিন প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক পবিত্র সরকার। সঞ্চালক অধ্যাপক শাশ্বতী গাঙ্গুলির অনুরোধে তিনি একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে এই পর্বের অনুষ্ঠানের সূচনা করলেন। অসামান্য পরিবেশন পবিত্র সরকারের।
এদিন সম্মাননা জ্ঞাপন করা হল সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল, টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন সম্পাদক কিংশুক নাগ, দিল্লির বর্ষীয়ান কবি গৌতম দাশগুপ্ত, কবি-অধ্যাপক মুন্সী মহম্মদ ইউনুসকে এবং সৈয়দ হাসমত জালালকেও।
চমৎকার সঞ্চালনা করলেন অধ্যাপক শাশ্বতী গাঙ্গুলি।
লেখকের মুখোমুখি পর্বে ছিলেন ইন্দিরা দাশ, সরিৎ চ্যাটার্জি ও কবি শৌভ চট্টোপাধ্যায়। সুন্দর সঞ্চালনা করলেন অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
জয়ন্ত ঘোষালের মুখোমুখি সৌরাংশু সিংহ আর কিংশুক নাগের মুখোমুখি ছিলেন সুমন্ত ভৌমিক। অত্যন্ত মনোগ্রাহী এই দুটি ভিন্নধর্মী আলোচনা।
দিল্লি শহরে বাংলা ভাষা, বাংলা বই, বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে এমন আলোচনা কলকাতাতেও আজকাল বিরল। বাংলার বাইরে এক অসাধ্য সাধন করে চলেছে দিল্লির বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন।
দিল্লি বইমেলায় রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকারের হাতে উদার আকাশ বইমেলা সংখ্যা এবং উদার আকাশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত অমল সরকারের লেখা ‘বাবরি ধ্বংসের তিন দশক ষড়যন্ত্র সুবিধাবাদের আখ্যান’ মূল্যবান গ্রন্থটি রবীন্দ্র ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকারের হাতে তুলে দিলেন প্রকাশক-সম্পাদক-গবেষক ফারুক আহমেদ।
২১ বছর ধরে ঘটকপুকুর থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে ‘উদার আকাশ’ সাহিত্য পত্রিকা। উদার আকাশ প্রকাশন সংস্থা হিসেবে পাঠক দরবারে বেশ দাগ কেটেছে গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশ করে। ইতিমধ্যেই ১২৩ টি বই প্রকাশ পেয়েছে ‘উদার আকাশ’ প্রকাশন থেকে। দিল্লি বইমেলায় উদার আকাশ এবছর প্রথম স্টল পেলো। ২৪ থেকে ২৭ মার্চ দিল্লি বইমেলা মুক্তধারা, বঙ্গ সংস্কৃতি ভবনে জমে উঠে। বঙ্গ সংস্কৃতি উৎসব ও বইমেলায় বিভিন্ন দিনে উপস্থিত ছিলেন পবিত্র সরকার, কবি সুবোধ সরকার, রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার, সৈয়দ হাসমত জালাল, সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষাল, সমৃদ্ধ দত, তপন সেনগুপ্ত, সৌরাংশু সিংহ প্রমুখ।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের গবেষক ও উদার আকাশ প্রকাশন সংস্থার কর্ণধার ফারুক আহমেদ চারদিন মেলায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ১৯তম দিল্লি বইমেলায় অংশ নিয়ে বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। দিল্লিতে প্রায় কুড়ি লক্ষ বাঙালির অস্তিত্ব রয়েছে। আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলাতেও এবছর ভালো বিক্রি হয়েছে উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশনের বিভিন্ন গ্রন্থ। উদার আকাশ বইমেলা সংখ্যা সহ ১৩ টি নতুন বই উদার আকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে এবার। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ পাঠক দরবারে সমাদৃত হয়েছে, এতেই আমাদের প্রসায় সার্বিক সার্থকতা পেলো।