ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের জেরে পূর্ব ইউরোপের চার দেশ— স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়ায় অতিরিক্ত ৪০ হাজার সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো।
বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ন্যাটোর বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন জোটের মহাসচিব জিনস স্টলটেনবার্গ।
সংবাদ সম্মেলনে স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘ইউক্রেনে রুশ হামলার এক মাস পূর্ণ হলো। এই হামলার ফলে আসলে আমাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন ঘটে গেছে এবং ন্যাটো মনে করছে, অনাগত ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই পূর্ব ইউরোপের চার দেশে আরও ৪০ হাজার সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
রাশিয়া ও ইউক্রেনের দ্বিপাক্ষিক তিক্ত সম্পর্কের একদম গোড়ায় আছে ন্যাটো। পশ্চিমা দেশগুলোর এই সামরিক জোটকে কেন্দ্র করে ২০০৮ সাল থেকে দ্বন্দ্ব চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। ওই বছরই ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিল ইউক্রেন। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী সদস্য’ মনোনীত করার পর আরও বাড়ে এই দ্বন্দ্ব।
ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনকে চাপে রাখতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।
কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।
অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
মঙ্গলবার ২৭তম দিনে পৌঁছেছে এই অভিযান। এর মধ্যে ইউক্রেনের দু’টি শহর খেরসন ও ইজিয়ামের দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী।
বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, রুশ বাহিনী তার দেশে ফসফরাস বোমা ছুড়েছে এবং এতে শিশুসহ বেসামরিক লোকজন নিহত হয়েছে। তবে এই হামলা ইউক্রেনের কোথায় চালানো হয়েছে, তা তিনি উল্লেখ করেননি।
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে এ সম্পর্কে ন্যাটো মহাসচিব বলেন, ‘যদি সত্যিই এমন ঘটে থাকে, সেক্ষেত্রে এটি আন্তর্জাতিক আইনের সবচেয়ে সরাসরি ও নির্লজ্জ লঙ্ঘণ এবং তার ফলাফল হবে ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। যুদ্ধ বা সংঘাতের প্রকৃতি সম্পর্কে এতদিন আমদের যে ধারণা ছিল, তা সম্পূর্ণ বদলে যাবে।’
সূত্র: বিবিসি