শেষ কয়েক দিনে প্রতিপক্ষকে ৪ গোলের ভাসিয়ে দেওয়াকে যেন রেওয়াজেই পরিণত করেছে বার্সেলোনা। তবে সে রেওয়াজ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষেও পালন করে দেবে জাভি হার্নান্দেজের দল, তা বোধ হয় পাঁড় বার্সা-ভক্তও কল্পনা করেননি।
বিশেষ করে যে দল অপরাজিত শেষ পাঁচ ম্যাচ ধরে, যে দলকে বার্সা হারাতে পারে না শেষ পাঁচ এল ক্ল্যাসিকোয়, যে দল এই দেড় সপ্তাহ আগেই পিএসজিকে উড়িয়ে দিয়েছিল ৩০ মিনিটের ঝড়ে, সে দলকে এমন পর্যুদস্ত করাটা যেন বার্সেলোনার জন্য একটু বেশিই আশা করা হয়ে যেত; শেষ কিছু দিনের আগুনে ফর্মের পরেও। তবে জাভির বার্সা সে ‘অকল্পনীয়’ কাজটাই করে বসেছে, রিয়ালের জালে গুনে গুনে জড়িয়েছে ৪ গোল।
অথচ এমন রাতের শুরুটা রিয়াল মাদ্রিদের এক আক্রমণ দিয়েই হয়েছিল। রদ্রিগো গোয়েজ লক্ষ্যে না রাখতে পারলেও গ্যালারির কাছে গিয়ে সমর্থকদের আওয়াজ আরও বাড়ানোর ইশারা দিয়ে বার্সাকে যেন একটা বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন। তবে সে বার্তা আর কাজে লাগেনি পরে৷ সময় একটু গড়াতে মাঝমাঠের দখলটা বুঝে নেয় বার্সা।
তাতে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো অ্যানচেলত্তির দায়ও আছে কিছুটা। কারিম বেনজেমার অনুপস্থিতিতে দলকে সাজিয়েছিলেন ৪-১-৪-১ ছকে৷ নতুন কৌশলে ধাতস্থ হওয়ার আগেই বার্সার কাছে চলে যায় ম্যাচের লাগাম, তাতে রিয়ালও যায় খানিকটা হকচকিয়ে।
ম্যাচের কর্তৃত্ব আগেই বুঝে নেওয়া বার্সেলোনা প্রথম গোলের দেখা পায় ২৯ মিনিটে গিয়ে। উসমান দেম্বেলের ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন পিয়েরে এমেরিক অবামেয়াং, রিয়ালের বিপক্ষে আগের ছয় ম্যাচে যার গোল ছিল ছয়টি। এর আগেই অবশ্য গোলের দেখা পেয়ে যেতে পারত বার্সা, যদি ফেররান তরেস, দেম্বেলে, অবামেয়াংরা তিনটে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট না করে বসতেন৷
এক গোলে পেছানো রিয়াল ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছে, তবে জেরার্ড পিকে, এরিক গার্সিয়াদের কাছে গিয়ে বারবার পরাস্ত হতে হয়েছে ভিনিসিয়াস জুনিয়রদের। বিরতির মিনিট সাতেক আগে উলটো আরও এক গোল করে ব্যবধান বাড়ায় বার্সা। কর্নার থেকে গোল করেন রোনাল্ড আরাউহো।
দুই গোলে পিছিয়ে বিরতিতে গেলেও রিয়ালের আশা তখনো শেষ হয়নি৷ সামগ্রিক লড়াইয়ে একই ব্যবধানে পিছিয়ে ম্যাচ জেতার নজির তো দলটা গড়েছিল এক ম্যাচ আগেই। তবেবড় একটা পার্থক্য ছিল বৈকি! পিএসজির বিপক্ষে সেই ম্যাচের নায়ক কারিম বেনজেমা যে ছিলেন না! তার অনুপস্থিতিতে রিয়ালের দেহভাষ্যে ফারাকটা চোখে পড়ছিল বেশ৷
সেটারই ফায়দা নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরও এক গোল করে বসে বার্সা। অবামেয়াংয়ের পাস থেকে এবার গোলটা করেন ফেররান তরেস। সেই গোলের পাঁচ মিনিট পর রক্ষণ থেকে পিকের বাড়ানো বল আয়ত্বে নিয়ে তরেস গোলমুখে বল বাড়ান অবামেয়াংকে। তার লব করা বল গিয়ে জড়ায় রিয়ালের জালে। শুরুতে অফসাইডের অজুহাতে গোল না দিলেও ভিএআর পরখের পর গোলটা পেয়ে যায় বার্সা, এগিয়ে যায় ৪-০ গোলে। ম্যাচের বয়স তখন মোটে ৫২ মিনিট। সান্তিয়াগো বের্নাবিউয়ের দর্শকদের মনে তখন আরও বড় হারের শঙ্কা।
বার্সেলোনা শেষ দেড় মাসে পাঁচবার প্রতিপক্ষের জালে জড়িয়েছে চার গোল। কে জানে সেই ধারাবাহিকতা রাখতেই কি-না, বার্সেলোনা এরপর গোল করার চেয়ে বেশি মনোযোগী হয় গোল আটকানোয়। তাতে সফলও হয়েছে বৈকি, মারিয়ানো ডিয়াজ, ভিনিসিয়াস, রদ্রিগোদের আটকে রেখেছে দারুণভাবেই। তাতেই ৪-০ গোলের অনবদ্য, অবিস্মরণীয় এক জয় এসে ধরা দেয় বার্সেলোনার হাতে। আর রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে জমা পড়ে আরও এক দুঃসহ স্মৃতি।