অলোকা ভৌমিক। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে ১৯৪৭ সালের ১০ জানুয়ারী , বাবা জ্যোতিষ চন্দ্র সরকার ও মাতা চমৎকারিনী সরকার‘এর সংসারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তৎকালীন সময়ে মেয়েদের লেখাপড়ার পরিবেশ ও সুযোগ না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডিটুকুও পেরোতে পারেননি অলোকা ভৌমিক।
৭৫ বছর বয়সী নিঃসন্তান বৃদ্ধা আলোকা ভৌমিক প্রাতিষ্ঠানিক তেমন কোন শিক্ষা ছাড়াই দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর ধরে কবিতা, গল্প, গ্রন্থ, প্রবন্ধ রচনা করে চলেছেন। তাঁর লিখনিতে আছে অসাম্প্রদায়িকতার ছাপ। মহানবীর জীবনী, রাধা কৃষ্ণ এবং নাটোরের রানী ভবানী ও রানী রাসমনীর জীবন কাহিনী নিয়ে লেখা বই প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয়রা তাঁকে চারণ কবি বলে আখ্যায়িত করেছেন।
অদম্য সাহিত্যিক অলোকা ভৌমিকের লেখা অমৃত, অমিয় বাণী, অমিয় সুধা (সনাতন ধর্ম বিষয়ক), একগুচ্ছ কবিতা (কাব্যগ্রন্থ), সেতুবন্ধন (কাব্যগ্রন্থ), সম্মিলিত কাব্যগ্রন্থ (কাব্যগ্রন্থ), এক মুঠো রোদ্দুর (কাব্যগ্রন্থ), ছোট-বড় কবিতা (কাব্যগ্রন্থ), নারীর আত্নকথা, উদয়ের পথে ( প্রবন্ধ), অতৃপ্ত সনাতনসহ মোট ১৪ টি বই প্রকাশিত হয়েছে। অপেক্ষায় রয়েছে আরো কিছু বই প্রকাশের।
অলোকা ভৌমিক স্বামী হারিয়েছেন সেই কবে। নিজের স্বামীর ভিটাতেও একপ্রকার পরবাসী। ১৬ বছর বয়সে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার তিরাইল গ্রামে যাযাবর স্বামী বিশ্বনাথের বাড়িতে বধূ হয়ে এসেছিলেন।স্বামীর বাড়িসহ জমি ছিল ১৬ বিঘার মতো।স্বামী জীবিত থাকতেই সেইসব জমি বিক্রি করে দিয়েছেন।
অলোকা ভৌমিক যখন বিধবা হলেন তখন তার ভিটেমাটি পর্যন্তও নেই। সব বিক্রি হয়ে গেছে। অলোকা ভৌমিক‘এর ভিটেবাড়িটি যারা কিনেছিলেন তারাই দয়া তাঁকে থাকতে দিয়েছেন।এই থাকাটা হয়ত অস্তিত্ব রক্ষায় বেঁচে থাকা। তার হৃদয়ে যে যন্ত্রনা সেটা বোঝার মতন কোন মানুষ আজ নেই!
বয়স্ক ভাতা ও স্বজনদের পাঠানো অর্থ থেকে আধপেট খেয়ে তা থেকে সঞ্চিত অর্থে কাগজ-কলম কিনে লিখছেন একের পর এক কবিতা ও প্রবন্ধ।প্রতি বছর বই প্রকাশ করলেও তিনি তা সবাইকে বিনামূল্যে বিতরণ করে দেন। বেসরকারী নানা প্রতিষ্ঠানের থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন বটে, কিন্তু এখনও মেলেনি কোনও সরকারী পুরস্কার বা সম্মাননা ।
অদম্য এই অলোকা ভৌমিক বড় নিভৃতচারী। তবে অখ্যাত বলে তিনি এখনো অবহেলিত। মৃত্যুর আগে কি এই মহিয়সী নারী এভাবেই না পাওয়ার ব্যথা বেদনা বুকে নিয়ে কালান্তরের স্রোতে নিঃশব্দে নীরবে-নিভৃতে অকাতরে হারিয়ে যাবে?