ইউক্রেনের মারিউপোল শহরের প্রসূতি হাসপাতালে রাশিয়ার বোমা হামলায় অন্তঃসত্ত্বা এক নারী ও তার সন্তান মারা গেছেন। সন্তান জন্মদানের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হলেও রুশ হামলায় শিশুসহ ওই নারী মারা গেছেন বলে মার্কিন বার্তাসংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, গত বুধবার মারিউপোলের মা ও শিশু হাসপাতালের স্ট্রেচারে করে এক নারীকে অ্যাম্বুলেন্সের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওই হাসপাতালে রাশিয়ার বোমা হামলায় তিনিসহ আরও এক ডজনের বেশি মানুষ আহত হন। এছাড়া মারা যান অন্তত তিনজন।
হাসপাতাল আক্রান্ত হওয়ার পর এপির সাংবাদিকরা সেখানে পৌঁছে ছবি এবং ভিডিও ধারণ করেন। এতে দেখা যায়, অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর তলপেটে আঘাত পেয়েছেন। রক্তাক্ত এই নারীকে উদ্ধারকারীরা স্ট্রেচারে করে অবরুদ্ধ মারিউপোলের ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে নিয়ে যান। তার সঙ্গে যা ঘটেছে, সেটির আকস্মিকতায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন তিনি। তার চোখে মুখে দেখা যায় আতঙ্ক।
ইউক্রেনে রাশিয়ার ১৯ দিনের যুদ্ধের সবচেয়ে নৃশংস মুহূর্তগুলোর অন্যতম একটি ছিল বোমার আঘাতে অন্তঃসত্ত্বা এই নারীর আহত হওয়ার ঘটনা।
পরে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে অন্য একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাকে এবং তার সন্তানকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকদের চেষ্টা ব্যর্থ হতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে ওই নারী কান্না করতে করতে বলেছিলেন, আমাকে এখনই মেরে ফেলুন।
হাসপাতালের চিকিৎসক তিমুর মারিন দেখতে পান, ওই নারীর নিতম্ব বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শনিবার জরুরি সি-সেকশনের মাধ্যমে ওই নারী সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু চিকিৎসকরা ওই শিশুর প্রাণের কোনো স্পন্দন পাননি। পরে তাকে মৃত ঘোষণা করেন তারা।
পরে চিকিৎসকরা শিশুটির মাকে বাঁচানোর দিকে নজর দেন। সন্তান জন্মের ৩০ মিনিট পরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি ওই মায়ের। পরে তিনিও মারা যান।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ ওঠার পর রাশিয়ার কর্মকর্তারা ওই হাসপাতাল নিজেদের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহারের জন্য ইউক্রেনীয় চরমপন্থীরা দখলে নিয়েছিল বলে দাবি করেছেন। রুশ কর্মকর্তারা বলেছেন, বোমা হামলার সময় হাসপাতালে কোনো রোগী অথবা চিকিৎসক ছিলেন না।
জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত এবং লন্ডনে নিযুক্ত রুশ দূতাবাস হাসপাতালে হামলায় আহত অন্তঃসত্ত্বা নারীর ছবিকে ভুয়া বলে দাবি করেছেন।