ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে “নাপা সিরাপ খেয়ে” মোহাম্মদ ইয়াসিন খান (৭) ও মুরসালিন খান (৪) নামের দুই ভাইয়ের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর সারা দেশ থেকে তিনটি নির্দিষ্ট ব্যাচে প্রস্তুত ঔষধটির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে পাঠায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তবে নমুনা পরীক্ষায় ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
সোমবার ( ১৪ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
তবে ওই শিশু দুটির মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও উদঘাটন করা হয়নি। সেটা ভিসেরা রিপোর্টে পাওয়া যাবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, “আশুগঞ্জের যে দোকান থেকে ওষুধ কিনে সেবনের পর শিশু দুটি মারা গেছে, সেই দোকানের ৮টি বোতল সংগ্রহ করা হয় স্যাম্পল হিসেবে। এছাড়া আরও দুটি ব্যাচের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু নমুনা পরীক্ষায় ওই তিনটি ব্যাচের নাপা সিরাপে কোনো ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি।”
তবে যে বোতলের সিরাপ সেবন করে শিশু দুটি মারা যায়, সেই বোতলের সিরাপ পরীক্ষা করতে পারেনি ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। স্যাম্পল হিসেবে যেগুলো নেওয়া হয়েছিল শুধু সেগুলোর নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
এ বিষয়ে মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, “যে বোতলের সিরাপ সেবন করে শিশু দুটির মৃত্যু হয়, সেই বোতল সিআইডি জব্দ করে নিয়ে গেছে। সিআইডির প্রতিবেদন পাওয়ার পরই বলা যাবে, শিশু দুটি নাপা সিরাপ খেয়ে মারা গেছে কি না।”
এদিকে মৃত শিশু দুটির মায়ের বরাত দিয়ে জেলার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ বলেন, “শিশু দুটি কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিল। তাই স্থানীয় একটি দোকান নাপা সিরাপ এনে তাদেরকে খাওয়ানো হয়েছিল। বিকেল ৫টার দিকে তাদের দুজনকে একসঙ্গে একই বোতলের সিরাপ খাওয়ানো হয়। এর কিছুক্ষণ পর দুজনেই বমি করতে শুরু করে।”
তিনি জানান, অসুস্থ হওয়ার পর শিশু দুটিকে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। তারপর সেখান থেকে শিশু দুটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে সাত ও পাঁচ বছর বয়সী শিশু দুটি বাড়িতেই মারা যায়।
কিন্তু জেনারেল হাসপাতাল থেকে শিশু দুটিকে কেনো বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং তাদেরকে সেখানে কী চিকিৎসা সেখানে দেওয়া হয়েছিল? এই প্রশ্নের জবাব এখনো মিলছে না। সিভিল সার্জন জানিয়েছে, তারা এখনো এ ব্যাপারে তদন্ত করছেন।
মৃত শিশু দুটির বাবা একটি ইট ভাটার শ্রমিক। শিশুদের মধ্যে বড় ভাই স্থানীয় একটি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে ভেজাল ঔষধ খেয়ে বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনা ঘটে। সে সময় বিভিন্ন হাসপাতালে প্যারাসিটামল সিরাপ পান করে অন্তত ২৮টি শিশুর মৃত্যু হয়।