রুশ সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের প্রথম ১৭ দিনে ইউক্রেনের অন্তত এক হাজার ৩০০ সৈন্য নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শনিবার রাজধানী কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনের সৈন্যদের প্রাণহানির এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি। তবে রাশিয়ার সৈন্য হতাহতের ব্যাপারে কোনো তথ্য জানাননি তিনি।
জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩০০ ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত হয়েছেন। জেলেনস্কির এই তথ্য নিরপক্ষেভাবে যাচাই করা যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি। বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলেছে, পশ্চিমা সূত্রগুলোর ধারণা— একই সময়ে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রায় ৬ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছেন।
এদিকে, শনিবার রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠের ছোট ছোট শহরগুলোতে রুশ সৈন্যদের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়েছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, রাশিয়ার ভারী গোলাবর্ষণ, বিমান হামলার হুমকি এবং শহর ঘিরে ফেলার কারণে কিয়েভ ছাড়তে মরিয়া বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ান ট্যাক্টিক্যাল গ্রুপের ৩১টি ব্যাটালিয়নকে নিস্ক্রিয় করায় রাশিয়া নতুন করে সৈন্য পাঠাচ্ছে। ব্যাটালিয়ন নিস্ক্রিয় করার এই ঘটনাকে কয়েক দশকের মধ্যে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সবচেয়ে ক্ষতি বলে অভিহিত করেছেন তিনি। ইউক্রেনের এই প্রেসিডেন্ট বলেছেন, শুধুমাত্র শুক্রবারই রাশিয়ার ৫০০-৬০০ সৈন্য আত্মসমর্পণ করেছে।
শনিবার জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন জেলেনস্কি। টেলিফোনে আলাপকালে ইউক্রেনের মেলিতপোল শহরের মেয়রকে রুশ সৈন্যরা অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং মেয়রকে মুক্তি দিতে রাশিয়ার প্রতি চাপপ্রয়োগে ম্যাক্রোঁ ও শোলৎজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
পুতিনের সাথে আলোচনায় বসতে চান জেলেনস্কি, তবে…
কিয়েভ এবং মস্কোর সামরিক বাহিনীর যুদ্ধবিরতি ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের শান্তি আলোচনা নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শনিবার যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, ‘কিয়েভ এবং মস্কোর বাহিনীগুলোর মধ্যে যুদ্ধবিরতি ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে কোনো ধরনের শান্তি আলোচনা শুরু হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কূটনীতিকরা কাজ করছেন। তারা আমাদের এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে সম্ভাব্য একটি এজেন্ডার কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। আমি এটির বাস্তবায়ন চাই। শতভাগ যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে যুদ্ধ অবসানের প্রক্রিয়া, শান্তির প্রক্রিয়া শুরু হোক।’
তবে ইউক্রেনের এই নেতা বলেছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনার জন্য প্রস্তুত তিনি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটের সাথে টেলিফোনে আলাপকালে ‘পুতিনকে নিয়ে জেরুজালেমেও বসা যেতে পারে’ বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
রুশ এবং ইউক্রেনীয় আলোচকদের বৈঠকে কিছু ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে বলে পুতিন যে মন্তব্য করেছেন, সেটির উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘তিনি রুশ ফেডারেশনের সংকেত পেয়ে আনন্দিত। গত ১২ বছর ধরে আমি কখনই সংলাপের সম্ভাবনার ব্যাপারে কোনো কথা শুনতে পাইনি।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কিয়েভ মনে করে রাশিয়ার সাথে উচ্চ-পর্যায়ের যেকোনো ধরনের আলোচনা নিরপেক্ষ ভূখণ্ডে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। এ ধরনের আলোচনার সম্ভাব্য স্থান হিসাবে ইসরায়েলের কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, আরটি।