ভারতীয় সংগীত জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন অমিত কুমার। তিনি শুধুমাত্র জনপ্রিয় গায়ক নন, বরং তাঁর সঙ্গীত জীবন এক বিশেষ যুগের প্রতিনিধিত্ব করে। কিশোর কুমারের পুত্র হওয়ার সুবাদে সংগীত তাঁর রক্তে ছিল, কিন্তু তিনি নিজের প্রতিভা দিয়েই সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন।
শৈশব ও পরিবার
অমিত কুমার ৩রা জুলাই, ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা কিংবদন্তি গায়ক ও অভিনেতা কিশোর কুমার এবং মা বিখ্যাত অভিনেত্রী রুমা গুহ ঠাকুরতা। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রতি ঝোঁক ছিল এবং বাবার প্রভাবেই তিনি সংগীতের জগতে প্রবেশ করেন।
সংগীত জগতে প্রবেশ
অমিত কুমারের সংগীত ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৭০-এর দশকে। প্রথমদিকে বাবার ছায়ায় বড় হলেও দ্রুতই তিনি নিজের স্বতন্ত্র পরিচিতি তৈরি করেন। ১৯৭৪ সালে মুক্তি পাওয়া “Door Gagan Ki Chhaon Mein” ছবিতে গান গেয়ে তিনি প্রথমবার দর্শকদের নজরে আসেন।
জনপ্রিয়তা অর্জন
১৯৮০-এর দশকে অমিত কুমার জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যান। তাঁর গাওয়া গান “Bade Achhe Lagte Hain” (১৯৭৬) ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এরপর তিনি একের পর এক হিট গান উপহার দিতে থাকেন, যার মধ্যে রয়েছে:
- “Yaad Aa Raha Hai” (Disco Dancer, 1982)
- “Keh Doon Tumhe” (Deewaar, 1975)
- “Roz Roz Aankhon Tale” (Jeeva, 1986)
- “Oye Oye” (Tridev, 1989)
কিশোর কুমারের ছায়া
অনেকেই মনে করেন যে অমিত কুমার তাঁর বাবার জনপ্রিয়তার কারণে অনেক সুযোগ পেয়েছেন। তবে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন নিজের কণ্ঠস্বর ও গায়কীর দক্ষতার মাধ্যমে। তাঁর গলায় ছিল এক অনন্য মাধুর্য, যা তাঁকে সমসাময়িক অন্যান্য গায়কদের থেকে আলাদা করে তুলেছে।

সংগীতে বৈচিত্র্য
অমিত কুমার শুধুমাত্র রোমান্টিক গানেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং ডিস্কো, সফট মেলোডি, পপ এবং শাস্ত্রীয় ঘরানার গানেও সমান পারদর্শী ছিলেন। “Yaad Aa Raha Hai” গানটি বলিউড ডিস্কো মিউজিকের এক অনন্য উদাহরণ, যেখানে তাঁর কণ্ঠের শক্তি শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
বলিউডের বাইরে
শুধু হিন্দি নয়, বাংলা সিনেমাতেও তিনি সফল গান উপহার দিয়েছেন। তাঁর গাওয়া “Jodi Kichu Amare Sudo” গানটি আজও বাঙালির মনে দাগ কেটে আছে।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
অমিত কুমার তাঁর ক্যারিয়ারে অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। যদিও তিনি বাবার মতো এত বেশি পুরস্কার পাননি, তবুও তাঁর গানের জনপ্রিয়তা তাঁকে কিংবদন্তির আসনে বসিয়েছে।
বর্তমান জীবন
বর্তমানে তিনি সিনেমার গান থেকে কিছুটা দূরে থাকলেও সংগীতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। মাঝে মাঝে লাইভ কনসার্ট ও স্টেজ শো করেন এবং নিজের ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
অমিত কুমার ভারতীয় সংগীত জগতের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর কণ্ঠস্বর, গান এবং মিউজিক সেন্স এখনও সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে রয়ে গেছে। তাঁর গানের আবেদন কালজয়ী, যা ভবিষ্যতেও শ্রোতাদের মনে একইভাবে থাকবে।