রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ নিয়ে শঙ্কা দেখছে না কর্তৃপক্ষ। তবে তারা সব কিছু সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন।
জানা গেছে, প্রকল্পের কাজ স্বাভাবিকভাবেই চলছে এবং ২০২৩ সালে প্রথম ইউনিট উৎপাদনে যাতে যেতে পারে সেই গতিতেই কাজ চলছে। কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল আহসান বলেছেন, “এখানে কোনো সংকটের আশঙ্কা আমরা দেখছি না। তবে আমরা বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণে রেখেছি।”
গত বছরের ১০ অক্টোবর এই প্রকল্পের প্রথম চুল্লির কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটার কাজ শেষ হলে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। আর দ্বিতীয় চুল্লির কাজ শেষ হলে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা রয়েছে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।
একক প্রকল্প হিসাবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় অবকাঠামো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। আর এই অর্থের ৯০% রাশিয়ার ভিবি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশটি ঋণ সহায়তা হিসাবে দিচ্ছে।
রাশিয়ায় তৈরি ভিভিআর-১২০০ মডেলের এই পারমাণবিক চুল্লির বর্জ্য রাশিয়া নিয়ে যাবে।
জিয়াউল আহসান বলেন, “বর্তমানে এই প্রকল্পে ২৬ হাজারের মত লোক কাজ করছেন। বিদেশিদের মধ্যে রাশিয়া, ইউক্রেন এবং কাজাখস্তানের ছয় হাজার লোক কাজ করছেন। রাশিয়ার সবচেয়ে বেশি পাঁচ হাজার। বাকিরা স্থানীয়।”
তিনি বলেন, “এদের পেমেন্ট আমরা দেই না। আমরা এক একটি মাইলস্টোনের কাজ শেষে সার্টিফিকেট দেই। পেমেন্ট করে রুশ কর্তৃপক্ষ। আমাদের কাজ পূর্ণ গতিতেই চলছে। তারপরও আমরা পর্যবেক্ষণে রাখছি। যোগাযোগ রাখছি। আমাদের সুপারভিশনেই কাজ হচ্ছে। রাশিয়া হয়তো বিকল্প পদ্ধতিতে পেমেন্ট করবে। আমরা এখনো আশঙ্কার কিছু দেখছি না।”
এদিকে এই প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস জানান, বাংলাদেশের যারা প্রকল্পের কাজ করছেন তাদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন রাশিয়ায় প্রশিক্ষণে আছেন। তার মতে, প্রকল্পের কোনো কোনো কাজ ৭০%-এর মত শেষ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, রাশিয়ার ঋণের অংশের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তাই সুইফট নিষেধাজ্ঞায় বড় কোনো আশঙ্কার কারণ নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, “রাশিয়ার যে ব্যাংকগুলোর কথা বলা হচ্ছে সেসব ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের লেনদেন নাই। এখন যাদের সঙ্গে আমাদের লেনদেন আছে, সে ব্যাপারে অন্য কোনো অ্যারেঞ্জমেন্ট করা যায় কিনা আমরা দেখছি। আর রূপপুর প্রকল্পের ব্যাপারে আমরা এখনও কোনো সমস্যা দেখছিনা।”
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, “পরিস্থিতি বুঝতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। কারণ সুইফট কোড নিষেধাজ্ঞার পর বিকল্প লেনদেনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেখবে তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, সুইফট নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু বিকল্প পথও রয়েছে।
তিনি মনে করেন, “রূপপুর প্রকল্পের বিষয়টি যেহেতু সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তি তাই এখানে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রাশিয়া তার প্রতিবেশী বা অন্য বন্ধু দেশগুলোর মাধ্যমে লেনদেন করতে পারে। এটা সরাসরি পেমেন্ট-এর একটা পদ্ধতি।”
তিনি বলেন, “রাশিয়া চাইলে আবার অন্য মুদ্রায়ও পেমেন্ট করতে পারে। মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া, তাইওয়ান এইসব দেশে বাণিজ্য এভাবেই করা হয়। আরেকটা পথ আছে বিট কয়েন। বাংলাদেশে অবশ্য বিট কয়েন নিষিদ্ধ।”