দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে শুরু হওয়া বৃহত্তম আগ্রাসনের তৃতীয় দিনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর হামলার মুখে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ যখন পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে, ঠিক তখনই এই শহরটি ছেড়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় লভিভ অঞ্চলে পালিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
শনিবার রাশিয়ার পার্লামেন্ট ডুমার স্পিকার ভায়াচেসলাভ ভলোদিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের লভিভে পালিয়ে যাওয়ার দাবি করেছেন বলে জানিয়েছে রুশ সংবাদসংস্থা স্পুটনিক। তিনি বলেছেন, জেলেনস্কি ইতোমধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী ত্যাগ করেছেন।
নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে স্পিকার ভায়াচেসলাভ ভলোদিন লিখেছেন, জেলেনস্কি দ্রুত কিয়েভ ছেড়েছেন। গতকাল তিনি ইউক্রেনের রাজধানীতে ছিলেন না। দলবল নিয়ে তিনি কিয়েভ ছেড়ে লভিভে পালিয়েছেন। সেখানে তিনি এবং তার সহযোগীরা আগেই থাকার জায়গা ঠিক করে রেখেছিলেন।
ভলোদিন আরও বলেছেন, জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব ভিডিও প্রকাশ করেছেন, তা আগেই রেকর্ড করে রাখা ছিল। ইউক্রেনের আইনসভার সদস্যদের কাছে থেকে জেলেনস্কির পালিয়ে যাওয়ার তথ্য এসেছে বলে জানিয়েছেন রুশ এই স্পিকার।
এদিকে, রাশিয়ার প্রবল হামলার মুখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট তার সেনাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন বলে গুঞ্জন ওঠার পর ফের নতুন একটি ভিডিওবার্তা দিয়েছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। নিজের ধারণ করা এই ভিডিওতে তিনি ইউক্রেনের সেনাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে অনেক ভুয়া তথ্য ছড়িয়েছে। আমি সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দিয়েছি ও নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছি এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমি এখানেই আছি। আমরা অস্ত্র ছাড়ব না এবং দেশ রক্ষা করব।’
ইউক্রেনের রাজধানীর রাস্তায় এখন গুলির লড়াই চলছে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর। হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক রাজধানী ছেড়ে প্রতিবেশীে দেশগুলোতে পালিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই আটকে পড়েছেন। রাজধানীতে রুশ সৈন্যদের তীব্র হামলার মুখে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু মার্কিন এই ‘সাহায্য’ ফিরিয়ে দিয়েছেন তিনি। জেলেনস্কি বলেছেন, ‘লড়াই এখানে; আমার গোলাবারুদ দরকার, আমাকে সরিয়ে নেওয়ার দরকার নেই।’
মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি বলছে, কিয়েভে ব্যাপক সংঘর্ষের কারণে শত শত হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া কামানের গোলার আঘাতে কিয়েভের অনেক আবাসিক ভবন, সেতু ও স্কুল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া হামলার মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনের সরকারকে উৎখাত করতে পারে, এমন ইঙ্গিতও জোরালো হয়েছে।