ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, দেশের সামরিক অবকাঠামো এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। এমন অবস্থায় দেশের মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে দেশজুড়ে মার্শাল ল জারি করেছেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি লোকজনকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বিজয়ের শপথও করেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুরোদমে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পর ওই ভিডিও বার্তা দিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বরাত দিয়ে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি বলেছে, বৃহস্পতিবার উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের রাশিয়া এবং বেলারুশ থেকে আর্টিলারি আক্রমণের কবলে পড়েছে ইউক্রেন। হামলার জবাবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীও গোলা ছুড়ছে।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রুশ-সমর্থিত পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্রোহীদের হাতে ইউক্রেনের সরকার নিয়ন্ত্রিত শচস্ত্য শহরের পতন হয়েছে। তীব্র উত্তেজনার মাঝে জেলেনস্কি ইউক্রেনজুড়ে মার্শাল ল জারি করেছেন। একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন।
জো বাইডেন এবং জেলেনস্কির টেলিফোনে আলোচনার পর এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস বলেছে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আজ রাতে আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন এবং আমরা সবেমাত্র কথা বলা শেষ করেছি। আমি রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর বিনা উসকানিতে এবং অন্যায্য হামলার নিন্দা জানাই।
কিয়েভ ছাড়ছে আতঙ্কিত মানুষ
রাজধানী কিয়েভে অবস্থিত ইউক্রেনের সামরিক সদর দপ্তরে রাশিয়ার হামলার পর শহরটি ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন বহু মানুষ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, মস্কোর স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে প্রতিবেশী এই দেশটিতে হামলার ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর কিছু সময়ের মধ্যেই রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র ও কামানের গোলা ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত হানতে শুরু করে।
কিয়েভের সামরিক সদর দপ্তরের পাশাপাশি হামলা হয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনীর মিসাইল কমান্ড সেন্টারগুলোতেও। হামলার মুখে রাজধানী কিয়েভে জরুরি সাইরেন বাজায় কর্তৃপক্ষ। পরে আতঙ্কে শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করেন বহু মানুষ। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ছবিতে মহাসড়কে পলায়নরত মানুষের গাড়ির স্রোত ও জট দেখা যায়।
রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার এই আক্রমণের মুখে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়া আতঙ্ক ফুঁটে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। অনেকেই সেখানে জানিয়েছেন, নিরাপত্তার খোঁজে তারা নিরাপদ আশ্রয়ে, এমনকি বাড়ির বেজমেন্টেও অবস্থান নিয়েছেন।
টেলিভিশন ফুটেজেও মানুষকে দলবেঁধে রাস্তায় প্রার্থনা করতে দেখা যায়। এছাড়া কিয়েভ থেকে সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, রাজধানীর রাস্তায় খুব কম মানুষের দেখা মিলছে এবং বহু মানুষ টাকা তোলার মেশিনের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছেন।
রাশিয়ার হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার দাবি ইউক্রেনের
বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার পাঁচটি বিমান এবং একটি হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার দাবি করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পর এসব বিমান এবং হেলিকপ্টার ইউক্রেনের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছিল বলে জানিয়েছে কিয়েভ।
ইউক্রেনের আর্মি জেনারেল স্টাফের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যৌথ বাহিনী কমান্ডের মতে, আজ (২৪ ফেব্রুয়ারি) যৌথ বাহিনীর অভিযানের এলাকার আক্রমণকারীদের পাঁচটি বিমান এবং একটি হেলিকপ্টারে গুলি চালিয়ে ভূপাতিত করা হয়েছে।’
এদিকে, ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের সামরিক সদর দপ্তরে মিসাইল হামলার ঘটনা ঘটেছে। একইভাবে হামলার ঘটনা ঘটেছে দেশটির সামরিক বাহিনীর মিসাইল কমান্ড সেন্টারগুলোতেও। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের দোনবাস অঞ্চলে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন।
সূত্র: এএফপি।