চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচ বন্ধুর লাশ পুলিশের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছেন তাদের স্বজনরা। বাধা দিলে পুলিশ সদস্যদের ওপর চড়াও হন তারা। এ সময় মারমুখী স্বজনদের ছোড়া ইটপাটকেলে দুই পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এলাকাটি কুমিল্লার নিকটবর্তী। ঘটনার জেরে চিতোষী-হাসনাবাদ স্থানীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পুলিশ বিষয়টি স্বীকার করলেও বিস্তারিত জানাতে রাজি হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গাড়ি দুর্ঘটনায় কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ এলাকার তিন ব্যক্তিসহ পাঁচজন নিহত হন। ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের লাশ নিতে স্বজনরা আবেদন জানালে প্রশাসন রাজি হয়নি। এ ঘটনায় স্বজনরা ক্ষুব্ধ হন।
দুর্ঘটনার পর লাশগুলো রাখা হয়েছিল শাহরাস্তির উঘারিয়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে। সেখান থেকে বিকেলে শাহরাস্তি থানায় নেওয়ার পথে স্বজনরা পুলিশকে বাধা দেন। একপর্যায়ে ইটপাটকেল ছুড়ে লাশ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছোড়ে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর পুলিশ লাশ নিয়ে থানায় আসতে সক্ষম হয়।
এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত জনতা চিতোষী সেতুর ব্যাপক ক্ষতি করে। বেশ কিছু দোকানপাট ও ঘরবাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
তবে এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা বা কাউকে আটক করা হয়নি।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, “ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা করেছি। আমিও সেখানে যাচ্ছি।”
এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে শাহরাস্তির পূর্ব নরহ গ্রামে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় নিহত হন তুষার, শাকিল, শান্ত, নয়ন ও সাগর নামে পাঁচজন।
কুমিল্লা সদরে এক বন্ধুর বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সম্প্রতি যশোর থেকে নয়ন এবং গাজীপুর থেকে সাগর কুমিল্লায় আসেন। সাগর সম্পর্কে নয়নের ফুফাতো ভাই।
কুমিল্লায় তাদের সঙ্গে যোগ দেন আরও তিন বন্ধু তুষার, শাকিল ও শান্ত। তুষার কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আর রেজাউল করিম শান্ত ছিলেন মনোহরগঞ্জ উপজেলার ঝলম ইউনিয়ন ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক। তাদের আরেক বন্ধু মো. শাকিলও ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।