হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তার মৃত্যুর সংবাদ টুইট করে জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ শান্তনু সেন। মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৯০ বছরের এই কিংবদন্তি।
এর আগে, ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রবাদপ্রতিম সংগীতশিল্পী। শিল্পীর বাড়ির লোকজন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চাইলেও, শিল্পীর যেহেতু হৃদযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে, তাই কোনো ঝুঁকি নিতে চাননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এসএসকেএম থেকে শিল্পীকে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ঘটনাচক্রে ভারত সরকারের দেওয়া পদ্ম সম্মান কিছুদিন আগেই প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। হতাশা আর অপমানের বেদনা নিয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় জানান, দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট সচিবালয় থেকে তাকে ফোন করে বলা হয় “আপনাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হবে, আপনি কী এই সম্মান নেবেন? তারা জানেন তা আমি কে? এভাবে কেউ পদ্মশ্রী দেয়?”
আফসোস করে এ গীতশ্রী জানান, শেষে এই ৯০ বছর বয়সে এসে আমাকে পদ্মশ্রী নিতে হবে! শিল্পীদের কি কোনো সম্মান নেই।
২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি প্রয়াত হন সুচিত্রা সেন। নিজেকে একেবারে আড়ালে রাখলেও রোমান্টিক বাঙালির কাছে সুচিত্রা ছিলেন অন্যতম আইডল। আর সুচিত্রা সেনের গান মানেই ছিল যেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। স্বর্ণকণ্ঠী শিল্পী এবং সুচিত্রা আসলে ছিলেন যুগলবন্দী।
সন্ধ্যার কণ্ঠ, সুচিত্রার কণ্ঠ মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। বাঙালি আসলে জানে না, সে কার প্রেমে পড়েছিল সুচিত্রা, নাকি সন্ধ্যার। “জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া” গেয়েছিলেন শিল্পী। গেয়েছিলেন, তার জীবনাবসানের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা গানের একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো। কিছুদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন লতা মঙ্গেশকর।
এবার সুরলোকে পাড়ি দিলেন তার বন্ধু সন্ধ্যা। “মধু মালতী ডাকে আজ”, “চন্দন পালঙ্কে শুয়ে”, “ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকিমিকি তারা”, “তুমি না হয় রহিলে”, “কী মিষ্টি দেখো মিষ্টি”, “আজ কৃষ্ণচূড়ার আবির” কিংবা “মায়াবতী মেঘে এলো তন্দ্রা”র মতো বাংলা গান যেমন গেয়েছেন শিল্পী, তেমনি হিন্দিতে “কৌন তেরাসে তুম খেলো, খেলো তো হোলি”-র মতো কঠিন গানও অনায়াসেই গেয়েছেন তিনি।
শাস্ত্রীয়সংগীত, লঘু শাস্ত্রীয় সংগীত, আধুনিক গান, নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসংগীত এবং সেই সঙ্গে মুম্বইয়ে হিন্দি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক- সবেতেই সন্ধ্যা নিজের ছাপ রেখেছেন। ভারতীয় মার্গসংগীতে ছিল তার অনায়াস বিচরণ৷ তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া শিল্পীমহলে। সংগীত জগত অভিভাবকহারা হয়ে পড়লো এমনটাই মনে করছেন তারা। রোশনি কুহু চক্রবর্তী।