সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহার ঘোষণার পর সোমবার থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল। পরদিন মঙ্গলবার থেকে চলবে অনলাইনে ক্লাস।
রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বৈঠক চলে।
সরকারি কোনো নির্দেশনা না আসলে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে সশরীরে ক্লাস। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন।
এদিকে সোমবার পহেলা ফাল্গুন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৯১ সালের এই দিন থেকে ক্লাস শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। প্রতি বছরই দিনটিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের সঙ্গে মিটিংয়ের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগের মত জৌলুশ নিয়ে উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়াও মহামান্য আচার্য ভিসি অপসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম পালনের আহ্বান জানিয়েছেন মন্ত্রী।
রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আগের বছরের মতই সকল ধরনের কার্যক্রম থাকবে। এর মধ্যে পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আনন্দ শোভাযাত্রা, কেক কাটা প্রভৃতি বিষয়গুলো থাকবে।”
এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে চলমান আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, “মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী আমাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা তাদের ওপর আস্থা রেখে আপাতত আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলাম এবং আমাদের দাবী পূরণের অপেক্ষায় থাকলাম। আগামীকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক করে ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর আহ্বান জানাচ্ছি।”
এর আগে ঘটনার ২৮ দিন পর ১২ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলি ও লাঠিপেটার ঘটনাকে “অনাকাঙ্ক্ষিত” বলে দুঃখ প্রকাশ করেন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ যারা আহত হয়েছেন, সবার প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনতে শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ সরকারের সব স্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ সিলেটের সুশীল সমাজের সবাইকে এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় উপাচার্যকে গত ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতি দেওয়ার পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ১৬ জানুয়ারি প্রভোস্ট বিরোধী আন্দোলনের সময় অবরুদ্ধ উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে মুক্ত করতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। এ সময় আহত হন ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ। হামলার পরপরই প্রভোস্ট বিরোধী আন্দোলন উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।