গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে একের পর এক প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তকাজের সময় বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যসংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে এ তথ্য জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও তদন্ত কমিটির প্রধান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক।
প্রাণী মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করতে গত ২৬ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে বলা হয়। এ সময়সীমা শেষ হওয়ার পর আরও ১০ দিন সময় বাড়ানো হলো।
গত ২ জানুয়ারি থেকে সাফারি পার্কে একের পর এক মরতে থাকে জেব্রা। সর্বশেষ গত ২৯ জানুয়ারি সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে দুটি জেব্রার মৃত্যু হয়। গত ১২ জানুয়ারি একটি বাঘ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। খবরটি দীর্ঘদিন গোপন রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে পার্কটিতে একটি সিংহীর মৃত্যু হয়।
প্রাণী মৃত্যুর এসব ঘটনায় সাফারি পার্কের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. জাহিদুল কবির, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান ও সেখানকার বন্য প্রাণী চিকিৎসা কর্মকর্তা হাতেম জুলকারনাইনকে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বুধবার দুপুরে সাফারি পার্কের ভেতরে ঐরাবতী রেস্ট হাউসে বৈঠক করেছেন তদন্ত দল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বোর্ডের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ওই বৈঠকে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কমিটির কলেবর বাড়ানো হয়। এতে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি অনুষদের অধ্যাপক মো. আবু হাদী নূর আলী খান, কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারের (সিডিআইএল) প্রধান ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি হিসেবে একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।
তদন্ত কমিটিতে থাকা আগের পাঁচজন হলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান, ঢাকা বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ও কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের সাবেক প্রধান ভেটেরিনারি কর্মকর্তা এ বি এম শহীদুল্লাহ।
তদন্ত কমিটির প্রধান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন এখনো বাকি আছে। সব কটি হাতে না পেলে বিশ্লেষণ করা যাচ্ছে না। আনুষঙ্গিক কাজ করতে একটু সময় লাগবে। পত্রপত্রিকায় যে বিষয়গুলো আসছে, এগুলোও আমলে নিতে হবে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সময় বাড়াতে হয়েছে।
সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, বুধবার তদন্ত কমিটি ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বোর্ডের সদস্যরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখেন। তদন্তের স্বার্থে পার্কের বিভিন্ন পর্যায় থেকে আরও নতুন কিছু তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ করেন তারা। এর আগে গত মঙ্গলবার পার্কে এসেছিলেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা। প্রাণী মৃত্যুর ঘটনায় সিআইডির একটি তদন্ত দল কাজ করছে।