সার্থক হলো চিত্রনায়িকা নিপুণের কঠোর পরিশ্রম। বাতিল করা হলো দুইবারের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের প্রার্থিতা। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করায় আপিল বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জায়েদের বদলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে নিপুণকে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই পদে জয়ী হলেন নায়িকা।
শনিবার সন্ধায় এই ঘোষণা দিয়েছেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। এদিন বিকাল ৫টায় এফডিসিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মোতাবেক সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান ও কার্যকরী সদস্য পদে চুন্নুর নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে বৈঠকে বসে আপিল বোর্ড।
এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান, বোর্ডের সদস্য মোহাম্মদ হোসেন, দুই নির্বাচন কমিশনার জাহিদ হোসেন ও বি এইচ নিশান, অভিযোগকারী নিপুণ, নতুন সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন।
তবে এ বৈঠকে দুই অভিযুক্ত জায়েদ খান ও চুন্নু উপস্থিত ছিলেন না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান। এরমধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নতুন কমিটি নিয়ে জটিলতার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
শনিবার আপিল বোর্ডের ডাকা বৈঠকে যোগ দিতে মিছিল নিয়ে এফডিসিতে ঢোকেন নিপুণ। তার সঙ্গে ছিলেন চিত্রনায়ক সায়মন সাদিক ও চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে গেলেও এফডিসিতে যাননি জায়েদ খান ও চুন্নু। ফলে তাদের ছাড়াই বৈঠক শুরু করে আপিল বোর্ড। এরপর জানিয়ে দেয় সিদ্ধান্ত।
কিন্তু জায়েদ খান কোথায়? শুক্রবার জানিয়েছিলেন, নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি বিকাল পাঁচটার পর থেকে আপিল বোর্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কাজেই, তাদের ডাকা বৈঠকে যাবেন না তিনি। সেই কথাতে অনঢ় থেকেছেন জায়েদ খান। তিনি বৈঠকে আসেননি।
এমনকী, যেখানে বৈঠক হওয়ার কথা, সেই শিল্পী সমিতির কার্যালয়েও তালা লাগানো ছিল। সেখানে সবসময় দায়িত্ব পালনকারী দুই পিয়ন ফোন বন্ধ করে উধাও।
এদিকে বৈঠকের জন্য নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই এফডিসিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে এসে জমা হন মিশা-জায়েদের আমলে ভোটাধিকার হারানো শতাধিক শিল্পী। বিকাল তিনটা থেকে তারা এফডিসিতে অবস্থান নেন। চলে জায়েদ খানের বিপক্ষে বিক্ষোভ মিছিল।
ওই শিল্পীরা দলবদ্ধ হয়ে কেউ খালি গায়ে আল্পনা এঁকে তাদের অধিকার হরণ করায় জায়েদের বিচার দাবি করেন। এসময় ‘বিচার চাই, বিচার চাই, জায়েদ খানের বিচার চাই’ দাবিতে স্লোগান দেন শিল্পীরা।
সদ্য সমাপ্ত শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের কাছে ১৩ ভোটে হেরে যান নিপুণ। কিন্তু তিনি পরাজয় না মেনে নির্বাচনের পরদিন প্রথমে আপিল বোর্ডে লিখিত আবেদন করেন, যেন পুনরায় ভোট গণনা করা হয়। আপিল বোর্ড পুণরায় ভোট গণনা করে জানায়, ফলাফল ঠিক আছে, জায়েদ খানই জিতেছেন। নিপুণ ও তার প্যানেল পরবর্তীতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন।
অভিনেত্রীর অভিযোগ ছিল, জায়েদ খান টাকা দিয়ে ভোট কিনে নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করেছেন। নিপুণ একই অভিযোগ তোলেন জায়েদদের প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে জয় পাওয়া চুন্নুর বিরুদ্ধেও। সেই অভিযোগ ও আবেদন আমলে নিয়ে জায়েদ ও চুন্নুর প্রার্থিতা বাতিলের দিকনির্দেশনা চেয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান।
সেই চিঠি পাওয়ার পর গত বুধবার ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রকনুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে নির্বাচনের আপিল বোর্ড চূড়ান্ত ক্ষমতাপ্রাপ্ত। অর্থাৎ আপিল বোর্ড যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এর পরই বৈঠক ডাকে আপিল বোর্ড।
কিন্তু এই আপিল বোর্ডকে ‘অবৈধ’ ও ‘মেয়াদ উত্তীর্ণ’ তকমা দিয়ে জায়েদ খান জানান, তিনি বৈঠকে যাবেন না। শেষমেশ নিজের কথাতেই অনঢ় থাকেন। তিনি বৈঠকে না আসায় এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সরিয়ে নতুন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিপুণের নাম ঘোষণা করেছে আপিল বোর্ড। এবার এই সিদ্ধান্তের বিপরীতে জায়েদ কী পদক্ষেপ নেন সেটার জন্য অপেক্ষা।