গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ১০১ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে বলে স্বেচ্ছাসেবী একটি সংগঠনের তথ্যে উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে ৬২ জন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে ‘আঁচল ফাউন্ডেশন’ নামে সংগঠনটির জরিপে উঠে এসেছে।
এছাড়া মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
শনিবার সকালে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। দেশের প্রায় ৫০টি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার আত্মহত্যার সংবাদ বিশ্লেষণ করে সংখ্যাটি পেয়েছে সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা যেসব কারণে আত্মহত্যা করছে তার অন্যতম কারণ সম্পর্কের অবনতি। আত্মহত্যা করাদের মধ্যে ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশই বিভিন্ন ধরনের সম্পর্কের অবনতির কারণে করেছেন। এরপর রয়েছে পারিবারিক সমস্যার কারণে, যা ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।
এছাড়া মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, পড়াশোনা-সংক্রান্ত কারণে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ, আর্থিক সমস্যায় ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, মাদকাসক্ত হয়ে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের আত্মহত্যার হার বেড়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশই সম্পর্কের অবনতিজনিত কারণে আত্মহত্যা করেন। তবে গবেষকরা জানান, মূলত সম্পর্কের অবনতি, পারিবারিক জটিলতা, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সংকট আত্মহত্যার মূল কারণ।
আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্যে বলা হয়েছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বেশি আত্মহত্যা করেছে। ১০১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে নয়জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, এরপরই আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের। পুরান ঢাকায় অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন শিক্ষার্থী গত এক বছরে আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চার শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন গত বছরে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিন জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে উঠে এসেছে সমীক্ষা জরিপে।
সংস্থাটির হিসাবে, ২০১৮ সালে ১১ এবং ২০১৭ সালে ১৯ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিলেন।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের পর থেকে ১৫ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সে সময় মানসিক চাপে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। সে বছর দেশে ৫০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিল, যার ৪২ জন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
শীতকালে আত্মহত্যার হার বেশি
সমীক্ষার জরিপের তথ্য তুলে ধরে আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষকরা জানান, গত এক বছরে যারা আত্মহত্যা করেছেন তাদের মধ্যে ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে। এই মাসে গড়ে ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ আত্মহত্যা করেছে যা সংখ্যায় ১৫ জন। সবচেয়ে কম এপ্রিলে, যা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ বা ২ জন।
এতে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালের চেয়ে শীতকালে আত্মহত্যার হার বেশি। স্নাতক তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার তুলনামূলক বেশি, যা শতকরা হিসাবে ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ।